মানিকগঞ্জঃ সোমবার রাতে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যেই পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় ১০-১২টি বাড়ি। নদী চলে আসে হরিরামপুরের চর মুকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ভাঙনরোধে কাজও শুরু করেন মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মীরা। এদিন মধ্যরাতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে নদীতে। যদিও ভাঙনের গতি দেখে আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল আসবাব।
গতকাল বুধবার সকালে কথাগুলো বলছিলেন চর মুকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আওয়াল। তিনি জানান, বেশ কয়েকবার পদ্মা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে বিদ্যালয়টি। ২০০৬ সালে ওই জায়গায় দ্বিতল ভবন নির্মাণের পর সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। একসময় এখানে শতাধিক শিক্ষার্থী পড়তে আসত। তবে কমতে কমতে গত শিক্ষাবর্ষে তা ২৭ জনে দাঁড়ায়। চলতি শিক্ষাবর্ষে পড়ছে মাত্র ২০ জন।
আব্দুল আওয়াল বলেন, তিনজন শিক্ষকের মধ্যে দু’জনই ডেপুটেশনে। ভাঙন আতঙ্ক দেখা দেওয়ার পর চার দিন ধরে ক্লাস বন্ধ। আসবাবও সরিয়ে নেন। তবে তারা পাশের ধূলশুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস করছেন। মঙ্গলবার রাতে দ্বিতল ভবনের একটি অংশ পদ্মায় ভেঙে যায়।
ওই ইউনিয়নের ইসলামপুরের কাঞ্চন বেপারি সর্বস্ব হারিয়েছেন সোমবার রাতে। এখন অন্যের জায়গায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আধা ঘণ্টায় আমাদের সব শ্যাষ হইয়া গেছে।’ তাদের এমন পরিণতি যে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি।
একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন গৃহবধূ ময়না বেগম। কয়েক দিন ধরেই পদ্মার ভাঙনে তারা আতঙ্কে ছিলেন। ময়নার ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ৯টার দিকে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহভাবে বেড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই তাদের ঘর নদীতে বিলীন হয়। ওই ঘরে থাকা পাঁচ মণ সরিষা, ৫০ মণ ধান, ৪ মণ তিল ও ভুট্টা বের করারও সময় পাননি। সব হারিয়ে নিজেদের পথের ভিখারি মনে হচ্ছে ময়নার।
ওই রাতের বর্ণনা দেন আবিধারা এলাকার হারুন। তিনি বলেন, সোমবার রাতে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে আবিধারা ও ইসলামপুর গ্রামের বাদলের তিনটি ঘর যায় পদ্মায়। এ ছাড়া লিটন, রফিজ, কালাম, শাহিন, আফজাল বিশ্বাস ও সিদ্দিক মেম্বারের বাড়ি এবং সেকেন্দারের দোকানও তলিয়ে যায় মুহূর্তেই। প্রতি বছর পদ্মাতীরে ভাঙন দেখা দিলেও ওই এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মোহনপুর এলাকার সাগর মিয়া। তিনি দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
বুধবার সকালে ধূলশুড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহেদ খান বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। সোমবার রাতে মাত্র ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে ১২টি বাড়ি নদীতে চলে যায়।’ এভাবে সামান্য কিছু জিও ব্যাগ দিয়ে পদ্মার ভাঙন রোধ করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন জাহেদ খান। তিনিও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভাঙনকবলিত এলাকায় রয়েছেন মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন। তিনি বলেন, আপৎকালীন হিসেবে ১২শ মিটার জায়গায় ভাঙনরোধে কাজ শুরু করেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও কর্মীরা জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ, জিও টিউব ও ডাম্পিং কাজ করছেন। এরই মধ্যে বিদ্যালয় ভবনটি ভেঙে পড়ে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়