মো. সাইফুজ্জামানঃ দেশে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি গড়ে উঠেছে নানা ধরনের বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এসবের মধ্যে কিন্ডারগার্টেন অন্যতম, যা স্থানীয় পর্যায়ে কেজি স্কুল নামে পরিচিত। প্রাথমিক স্কুল জরিপ ২০২১-এর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, দেশে বর্তমানে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। দেশে কতটি বেসরকারি তথা কিন্ডারগার্টেন রয়েছে, সে বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে কয়েকভাবে বিভক্ত কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের ধারণামতে, এ সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠ পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ৬৭টি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) রয়েছে। এগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে চলেছে। কিন্তু কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি যেসব স্কুল রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ কি আছে?
সাধারণভাবে আমরা মনে করি, পড়তে পারলেই পড়াতে পারি। কিন্তু পড়ানো একটি বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কাজ, যা প্রশিক্ষণ কিংবা শিক্ষা বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের পেশাগত প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। বর্তমানে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছি। কিন্তু বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত এসব স্কুলের শিক্ষকদের পেশাগত প্রশিক্ষণের বাইরে রেখে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে কি?
শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও পরিবর্তিত বিশ্বপ্রেক্ষিত বিবেচনায় বর্তমান সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’ প্রণয়ন করেছে। এ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকে নতুন রূপরেখার আলোকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। নতুন রূপরেখায় বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আলোকে প্রণীত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সফলতা নির্ভর করছে মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা ও মনোযোগের ওপর। দেখা যাচ্ছে, শ্রেণি কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গে শিখনকালীন মূল্যায়ন সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য শিক্ষকদের যে পরিমাণ দক্ষতা প্রয়োজন, তার অনেকটাই অনুপস্থিত। নতুন এই মূল্যায়ন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এটিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে। শিক্ষকদের এই দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ইতোমধ্যে যতটুকু প্রশিক্ষণ হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং ক্ষেত্রবিশেষ এসব প্রশিক্ষণের মান নিয়েও শিক্ষক ও অভিভাবক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
সবার প্রত্যাশা, আগামীতে এসব প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের দুর্বলতাও কেটে যাবে এবং নতুন শিক্ষাক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু একটি বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বেসরকারি তথা কেজি স্কুল বিষয়ে। সরকারি হিসাবে দেশে যে ৫০ হাজারের অধিক বেসরকারি স্কুল রয়েছে, যারা সরকারি শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের আলোকে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাদেরও তো শিখন মূল্যায়ন নতুন রূপরেখার আলোকেই করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এসব স্কুল এখনও পুরোনো পদ্ধতি তথা শতভাগ পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সে জন্য বেসরকারিভাবে পরিচালিত এসব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের বাইরে না রেখে তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।
মো. সাইফুজ্জামান: শিক্ষাবিষয়ক উন্নয়নকর্মী
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৬/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়