বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যার আসামীদের গ্রেফতার এবং উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। শুক্রবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধনে যোগ দেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে রিফাতের হত্যাকে বিশ্বজিৎ হত্যার সঙ্গে তুলনা করে বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। আদালতের রায়ও দেওয়া হলো। কিন্তু এরপরও রাজনৈতিক বিবেচনায় ৬ জনকে মুক্তি দেওয়া হলো। এ ধরণের বিচার হলে তো দেশে অন্যায় বাড়বেই। দেশে আজ দু’ধরণের আইন চলছে। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য, অন্যটি সাধারণ মানুষের জন্য। এখন মামলা করতে গেলেও শুনতে হয়- কোন দল করেন? এভাবে দেশ চলতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সমাজ আজ কোথায় গেছে? প্রকাশ্যে একজনকে খুন করা হয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রতি অবিচার করে। দেশে যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে সেখানে মানুষ কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। ডাকসুর ভিপি বগুড়ায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলেও কোনো বিচার হয়নি। এ রাষ্ট্রই এখন অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে। এভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চলতে পারে না। কেউ এখানে নিরাপদ নয়। তিনি সরকারের কাছে সাগর-রুনি, তনু, নুসরাত, রিফাতের হত্যাকরীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। তনু হত্যা, বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার আমরা এখনো পাইনি। বর্তমানে এ দেশে আমরা কেউ নিরাপদ নই। এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। আমাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। রিফাত হত্যার বিচার না হলে সারা বাংলার ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।
যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, এই যে বরগুনায় রিফাতকে দিনে দুপুরে হত্যা করেছে সেখানে শুধু রিফাতকে হত্যা করেনি। দিনে দুপুরে তারা বাংলাদেশকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে সেখানে রিফাতের হত্যার বিচার হবে কিনা সন্দেহ। বিচারবিভাগের প্রত্যেকটা কাজে কেন প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে? এ থেকে বুঝা যায়, দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে গেছে।
ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, অপরাধের যখন বিচার হয় না তখন সন্ত্রাসীরা সাহস পায়। তিনি বলেন, রাষ্ট্র যতদিন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করবে ততদিন আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
এ সময় ঢাবি শিক্ষার্থী রামিম হোসেন বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা দিনে দুপুরে মানুষ কুপিয়ে হত্যা করার সাহস কোথায় পায়? এ সাহসের মূল কারণ হচ্ছে দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি বন্ধ না হলে এসব চলতেই থাকবে।’
প্রসঙ্গত, রিফাত শরীফ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরো দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরিফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দৃর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যলিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এর ভিডিওচিত্র ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।