বিনামূল্যের সরকারি বই কেজি দরে বিক্রি

গাজীপূরঃ সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। এ লক্ষ্যে বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিকট আগামী বছরের বইয়ের চাহিদা চাওয়া হয় উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে। কিছুকিছু প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনের চেয়েও অতিরিক্ত চাহিদা দিয়ে থাকেন। এভাবে প্রতি বছর প্রায় প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে অনেক বই অতিরিক্ত থেকে যায়। অতিরিক্ত বইগুলো শিক্ষা অফিসে ফেরত পাঠানোর বিধান থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান-ই সে আইন লঙ্ঘন করছে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর বই বিক্রির বিষয়ে তদন্তে গিয়েছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার পারভিন ইসলাম। দুর্নীতি তদন্তে গিয়ে ঘটে মহাদুর্নীতি। চুরি করে বই বিক্রি করায় বিগত বছরগুলোর কোন বই অতিরিক্ত নাই। সকল বই বিতরণ হয়ে গেছে এটা প্রমাণ করানোর জন্য শিক্ষকদের বসিয়ে দেওয়া হয় বিগত ৫ বছরের চাহিদা পত্র ও বই বিতরণ রেজিস্ট্রার দিয়ে। তারা নিজেরাই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের নামের স্থলে জাল স্বাক্ষর করছেন। এতে দেখা যায় ৯ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৩ জন অথচ বই বিতরণ করা হয়েছে ৪৭ জন শিক্ষার্থী নিকট। এ সব বিষয়ে মাদরাসাটির সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি প্রায় দেড় বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম। ২০২৩ সালের নতুন বই উত্তরের নতুন বিল্ডিংয়ের সিঁড়ির নিচে গ্রীল ও তালা লাগিয়ে বিতরণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করি। সেই সাথে পুরাতন বই ও খাতা পশ্চিমের বিল্ডিং এর সিড়ির নিচে রাখার ব্যবস্থা করি। ওখানে প্রায় ১৫-২০ বস্তা বই ও খাতা ছিল। হঠাৎ একদিন মাদরাসায় এসে শুনতে পাই ওগুলো নাই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি’।

ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সংবাদ কর্মীরা মাদরাসায় গেলে ওই অফিস সহকারী মাদরাসা থেকে সটকে পড়েন। মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারজানা বেগম প্রথমত এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বললেও একপর্যায়ে বলেন, ‘বই নয় খাতা বিক্রি করা হয়েছে’। তাহলে ২০২৩ ব্যতীত অন্যান্য সালে বইগুলো কোথায় ? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে তিনি সংবাদকর্মীদের ঘুষ দেয়ার অপচেষ্টা করেন।

শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমীন বলেন, ‘বই অতিরিক্ত হলে প্রতিষ্ঠানের সে বই বিধি মোতাবেক বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানকে আগেই বলা আছে, বই অতিরিক্ত হলে শিক্ষা অফিসে জমা দিবে, পরবর্তীতে বিক্রির প্রয়োজন হলে বিজ্ঞাপন দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা যাবে। ওই মাদরাসা সরকারি বই বিক্রি করে দিয়েছে, এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’। ৩৩ জন শিক্ষার্থী থাকলে ৪৭ জনের বই কিভাবে বিতরণ করে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন এখনও হাতে পাইনি, তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে জানাতে পারবো’।

এসব বিষয়ে মাদরাসা কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ওয়াহিদ হোসেন বলেন, এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখি। বই দিয়েছে সরকার। সে বই কারো বিক্রি করে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো। যদি বিক্রির বিষয়টি প্রমাণ হয় তাহলে দোষীরা কোনো ছাড় পাবে না।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/০৯/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়