বিজ্ঞানবিরোধীরা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভিক্ষুক বানাতে চায়: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পড়ানোর বিরোধিতাকারী ও জঙ্গিবাদের প্রশ্রয়দাতারা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভিক্ষুক বানাতে চায়, দেশকেও ভিক্ষুক বানাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বলেন, ‘মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কি বিজ্ঞান প্রযুক্তি পড়বে না? শুধু কি নামাজ পড়াবে আর নিজে একটি করে মাদরাসা তৈরি করবে? কিন্তু আমরা দেশকে ভিক্ষুকের দেশ থাকতে দিতে পারি না।’

সোমবার ইঞ্জনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্বাধীনতা মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের আয়োজনে শিক্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিখতে দেবে না, তারা তো দেখি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বেশি ব্যবহার করেন। ফেসবুকে মিথ্যাচার তারাই তো বেশি করেন। তাহলে প্রযুক্তি নেবো ইসলাম বিরোধী কাজ করার জন্য? মিথ্যাচার করার জন্য? তারা কি ইসলামের সেবক? মানুষ এক সময় হেঁটে, উটের পিঠে চড়ে হজ করতে যেত, এখন তো আমরা বিমানে যাই।

তাহলে কি বিমানে যাওয়া বন্ধ করে দেব? আমরা মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দেব? পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলে উঠবো না? আমার মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ডাক্তার হবে না? ইঞ্জনিয়ার, বৈমাণিক হবে না? শুধুমাত্র কি মসজিদে নামাজ পড়াবে? না হলে নিজে আরেকটা মাদরাসা খুলবে? তা না হলে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তো লাগবেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে জ্ঞান তা হঠাৎ করে এসে পড়েছে নাকি শিখতে হয়েছে? আল্লাহ প্রত্যেককে একটি (প্রতেক্যের মগজ) সুপার কম্পিউটার দিয়েছে, সেটি কাজে লাগাবো না? এইটি যে ব্যবহার করবো না, এই কথা যারা বলে, তাদের চেয়ে বড় ইসলামের শত্রু আর হতে পারে না।’

ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আল্লাহ কোরআনে প্রথম কথা বলেছেন—পড়ো। আর এরা পড়তেই মানা করে, শিখতেই মানা করে। আমাদের নবীজি কোন হাত পছন্দ করেতেন? দাতার হাত পছন্দ করতেন। আর উনারা চেষ্টা করছেন বিজ্ঞান প্রযুক্তি বন্ধ করে দিয়ে আমাদের ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে। আমরা বাঙালিকে কখনও ভিক্ষুকের জাতি থাকতে দিতে পারি না। আমরা জাতিকে এগিয়ে নিতে চাই।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের দেশকে ভিক্ষুক করে রাখতে চায়, যারা দেশের অগ্রগতিকে রুখতে চায়, যারা জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিতে চায় সেরকম লোককে আমরা কখনই ভাবতে পারি না যে তারা ইসলামের সেবক। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে, বাস্তবায়ন করা অনেক শক্ত। আমরা আপনারা শিক্ষকদের সহযোগিতা চাই।’

পাঠ্যবই ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘পাশের দেশের ছবি দিয়ে, ফটোশপ করে বলা হলো—এইটা আমাদের বাচ্চাদের পড়ানা হচ্ছে। যে বই দেশেই পড়ানো হয় না। একেবারে কদর্য ভাষায় মিথ্যাচার। আপনারা বলেন, মিথ্যাচার কি ইসলাম সমর্থন করে? আপনারা ইসলামের শিক্ষক আপনরাই বলেন। সমর্থন করে না। শিক্ষকদের, মন্ত্রীকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ, হুমকি দেওয়া এর কোনোটাই কি ইসলাম সমর্থন করে? ভুল থাকলে সংশোধন করবো। যেখানে ভুল পেয়েছি সেখানে সংশোধন করেছি, আরও ভুল থাকলে সংশোধন করবো। কমিটিও গঠন করা হয়েছে, কমিটি দেখবে। ২৬টি বই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তৈরি করা সহজ কাজ নয়।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ, স্বাধীনতা মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. তেলাওয়াত হোসেন খান এবং শিক্ষকরা।