বারবার ভুল করা শিক্ষকদের নিয়ে বিব্রত চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড

চট্টগ্রামঃ  সুমন চৌধুরী জেএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এসএসসিতেও ভালো করতে দিনরাত প্রস্তুতি নেয়। পরীক্ষাও দেয় ভালো। কিন্তু পরীক্ষার ফল হাতে পেয়ে বিস্মিত হয় সুমন! জানতে পারে, পাস করতেই পারেনি সে! এমন ফলে হতবাক তার মা-বাবা। ঘটনাটি তারা কোনোভাবেই মানতে পারেননি। তাই কয়েকটি বিষয়ে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেন। ‘ফেল করা’ সেই সুমন এবার পায় জিপিএ ৫।

সুমনের মতো চ্যালেঞ্জ করার পর খাতা পুনর্নিরীক্ষণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছে অনেক পরীক্ষার্থী। এতে সহপাঠীদের মতো ফল ঘোষণার দিনটি উদযাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। একই অবস্থা অভিভাবকদের ক্ষেত্রেও।

কেন এমন ঘটনা ঘটছে? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ ঘটনায় ভুল আসলে পরীক্ষকদের। তারা কেউ ‘৭’-এর স্থলে ভুল করে লিখছেন ‘০’, আবার কেউ ‘৯৯’-এর স্থলে ভুলে লিখেছেন ‘০৯’! এতেই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত ফল পাল্টে যাচ্ছে। অথচ ঘটনাগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই হচ্ছে না, যার খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রতিবছরই এমন ভুল করছেন কিছু শিক্ষক। এ জন্য তাদের দায়িত্বহীনতা, অসচেতনতা, অমনোযোগিতা ও অদক্ষতাকে দায়ী করছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতও তারা।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এসএসসির পুনর্নিরীক্ষণ ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষায় পাস করলেও পরীক্ষকদের ভুলে অনেক শিক্ষার্থীর ফল বিপর্যয় ঘটে। গত ছয় বছরে বোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করে ফেল থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১০৩ জন, ফেল থেকে পাস করেছে ৩৪১ জন এবং ফল পরিবর্তন হয়েছে ২ হাজার ৮২৪ জনের। চলতি বছর বোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের মাধ্যমে ১ হাজার ৮০ পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত এই ফলাফলে দেখা যায়– ফেল থেকে পাস করেছে ১৩০ জন এবং গ্রেড পরিবর্তন হয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৬২ জন। ফল নিয়ে অসন্তোষ থাকায় এবার রেকর্ড ২৬ হাজার ৬২২ পরীক্ষার্থী ৭১ হাজার ১০৮টি উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের জন্য বোর্ডে আবেদন করে।

২০২২ সালে ফেল থেকে পাস করে ৪৫ পরীক্ষার্থী। গ্রেড পরিবর্তন হয়ে জিপিএ ৫ পায় ২৪ জন এবং ফল পরিবর্তন হয় ১৮২ জনের। উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছিল ১৪ হাজার ৫২৫ জন। ২০২১ সালে পুনর্নিরীক্ষায় ফেল থেকে পাস করে ২৭ জন এবং ফলাফল পরিবর্তন হয় ৫৯ জনের। ওই বছর নতুন করে জিপিএ ৫ পায় ছয়জন। উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষায় ২০২০ সালে ফল পরিবর্তন হয় ৬০৯ জনের, তাদের মধ্যে ফেল থেকে জিপিএ ৫ পায় একজন এবং ফেল থেকে পাস করে ৪১ জন। ২০১৯ সালে ৩৬৫ জনের ফলাফল পরিবর্তন হয়, যার মধ্যে নতুন করে জিপিএ ৫ পায় ২৪ জন। ওই বছর ফেল থেকে পাস করে ৪৭ জন। ২০১৮ সালে ৫২৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়। এর মধ্যে, ফেল থেকে পাস করে ৫১ জন এবং নতুন করে জিপিএ ৫ পায় ৪৮ জন।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘পরীক্ষার ফল নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। তার পরও কিছু পরীক্ষকের অমনোযোগিতা, অসচেতনতা, দায়িত্বহীনতা ও অদক্ষতার কারণে ফল নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। পরীক্ষকরা যদি সঠিকভাবে খাতায় নম্বর দেন তাহলে পুনর্নিরীক্ষণে ফলাফল পরিবর্তন হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু পরীক্ষক ভুল করছেন। এমনকি একই শিক্ষক বারবার ভুল করছেন। বিষয়টি উদ্বেগের। এ জন্য অনেককে সতর্ক করা হয়েছে। তার পরও ভুল শোধরানো যাচ্ছে না।’ পরীক্ষক স্বল্পতার কারণে ভুল করা ওই শিক্ষকদের খাতা দেখা থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। বোর্ডের সাবেক এক চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘খাতা দেখার জন্য শিক্ষকরা সম্মানি পান। কিন্তু দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করেন না! বোর্ড কতবার একজন শিক্ষককে সতর্ক বা শোকজ করবে? অথচ তাদের ভুলের কারণে পরীক্ষার্থীদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’

বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বারবার ভুল করা ওই শিক্ষকদের নিয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিব্রত। তাদের কারণে বোর্ডের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সতর্ক করার পরও তারা একই ভুল করছেন। তাই এ ব্যাপারে কঠোর শাস্তির বিধান হওয়া দরকার।

এসএসসিতে খাতা পুনর্নিরীক্ষায় ফল পরিবর্তন হয়েছে কামাল হোসেনের। সে বলে, ‘সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়েছি গণিত বিষয়ে। কিন্তু রেজাল্টে দেখি গণিতেই ফেল! তাই আবার খাতা দেখার আবেদন করি। পরে গণিতে জিপিএ ৫ পেয়েছি।’ কামালের বাবা মো. ইরফান বলেন, ‘ফল খারাপ হয়েছে দেখেই অনেক পরীক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়। তাই পরীক্ষার রেজাল্ট শিটে যাতে ভুল না থাকে সে ব্যাপারে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হতে হবে।’ সূত্রঃ সমকাল

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৫/০৯/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়