ঢাকাঃ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদ (ইউএনএইচআরসি)। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ন্যায্য মজুরি ও স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মী ও রাজনীতিবিদদের ওপর দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের নেতাদের বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাকস্বাধীনতা নিয়ে বিতর্কিত আইন সংস্কার সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। মানবাধিকার পরিষদ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে রিভিউ প্রকাশের পর এসব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘২০২৪ এর শুরুতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি, বিরোধী সিনিয়র নেতাদের আটক, হাজারো রাজনৈতিক কর্মীদের গণআটক, আন্দোলন থামাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে। এ ছাড়া হয়রানি, হুমকি প্রদর্শন, অবৈধ আটকও করা হচ্ছে। এই ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে চলা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হুমকি, নজরদারি, হুমকি প্রদর্শন ও বিচারিক হয়রানির কারণে মিডিয়া সেলফ-সেন্সরশিপ করছে।বিচারিক ব্যবস্থাকে হাতিয়ার বানিয়ে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের নেতাদের আক্রমণ করা হচ্ছে।’
বিচারিক হয়রানির উদাহরণ হিসেবে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ‘দুই বছর ধরে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি প্রশাসন। কিন্তু বারবার শুনানিতে তাকে ডাকা হচ্ছে এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাখা হয়েছে। এতে করে তার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
সেপ্টেম্বরে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর পরিচালক ও সেক্রেটারির বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনে কারাগারে পাঠানো হয়। গত বছর এই সংগঠনের নবায়নের আবেদনও প্রত্যাখ্যান কর হয়। ২০১৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর বিচাবহির্ভূত হত্যা নিয়ে তারা তথ্য প্রকাশ করেছিলেন।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘নোবেল বিজয়ী অর্থনীতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান কিংবা নাসিরুদ্দিন এলানের মতো সুশীল সমাজের নেতাদের যখন অভিযুক্ত বা গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তা সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের জন্য ভয়ংকর এক বার্তা দেয়। এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সমালোচনামূলক বক্তব্য দেওয়া হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা আপনি যেই হন না কেন।’
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, সরকারি হিসেব অনুযায়ী বাকস্বাধীনতার কারণে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ৫ হাজার ৬০০ মামলা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা চলছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আইন পরিবর্তনের কথা বলা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক ছিল, সাইবার সিকিউরিটি আইনে তা থেকেই গেছে। এতে করে বাকস্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানবাধিকার পরিষদের এই রিভিউ দেখে বাংলাদেশ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে। তারা বলেন, ‘আমরা মানবাধিকার পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই তারা যেন বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যেন স্বাধীন ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।‘
বিষয়টি নিয়ে জাতিষংঘের বিশেষ দূতরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে জানানো হয়েছে মানবাধিকার পরিষদের ওয়েবসাইটে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৫/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়