বাংলাদেশের বড় হার

প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৯১ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। বিদায়ী ওয়ানডেতে একের পর এক ইয়র্কার দিয়ে সফরকারীদের কাঁপিয়ে দিলেন লাসিথ মালিঙ্গা।

শুক্রবার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ৩১৪ রানের বড় সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা।জবাবে ৪১ ওভার ৪ বলে ২২৩ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা নতুন বল। ২১ মাস পর দেশের হয়ে খেলতে নামা শফিউল ইসলামের হাত ধরে তৃতীয় ওভারে মেলে প্রথম সাফল্য। বিশ্বকাপে তিন নম্বরে সফল আভিশকা ফার্নান্দো ব্যর্থ ওপেনিংয়ে নেমে। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ধরা পড়েন স্লিপে।

শুরুর সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। কুসল পেরেরা ক্রিজে গিয়ে শট খেলতে শুরু করতেই বেরিয়ে পড়ে নতুন বলে বাংলাদেশের দৈন্য। কোন লাইন-লেংথে বল করবেন যেন বুঝতেই পারছিলেন না বোলাররা। প্রথম ৪ ওভারে ১৩ রান নেওয়া লঙ্কানরা পরের ৬ ওভারে যোগ করেন ৬৪।

এমনিতে ধীর-স্থির ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত হলেও এদিন দিমুথ করুনারত্নে রান তোলেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। আক্রমণে ফিরে স্বাগতিক অধিনায়ককে ফিরিয়ে ৯৭ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ।

নতুন ব্যাটসম্যান কুসল মেন্ডিস শুরুতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। তবে সুযোগটা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। দুই কুসলের জুটির রান পঞ্চাশ পার হওয়ার পর একটা সুযোগ তৈরি করেছিলেন গোল্ডেন আর্ম সৌম্য সরকার। মেন্ডিসের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।

পরে সৌম্যই ভাঙেন দুই কুসলের জুটি। ওয়ানডেতে পঞ্চম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পর শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান পেরেরা। ২০১৪ সালের পর এই মাঠে প্রথম লঙ্কান ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ১১১ রানের দাপুটে ইনিংস গড়া ১৭ চার ও ১ ছক্কায়। ভাঙে ১০০ রানের জুটি।

রুবেল হোসেনের বলে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে যান কুসল মেন্ডিস। নয় বলের মধ্যে দুই থিতু ব্যাটসম্যানের বিদায়ে একটু কমে রানের গতি।

পুরান বলে নিয়মিত উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ খুব বেশি বড় করতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। লাহিরু থিরিমান্নেকে ফিরিয়ে ৬০ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। পরে বিদায় করেন এই জুটির আরেক ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে। মুস্তাফিজের দুই উইকেটের মাঝে বিপজ্জনক থিসারা পেরেরাকে দ্রুত বিদায় করেন শফিউল। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ফিরিয়ে নেন নিজের তৃতীয় উইকেট।

তুমুল করতালির মধ্যে ব্যাটিংয়ে আসেন মালিঙ্গা। নিজের সবশেষ ওয়ানডে ইনিংসে অপরাজিত থাকেন ৬ রানে।

৩১৫ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে তামিমকে বোল্ড করেন লাসিথ মালিঙ্গা। দলীয় ১ রানের মাথায় বিদায় নেন বাংলাদেশ দলপতি। দলীয় ৩০ রানের মাথায় নুয়ান প্রদীপের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন মোহাম্মদ মিঠুন। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি করেন ২১ বলে ১০ রান। ৩০ রানের মাথায় বিদায় নেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার। মালিঙ্গার অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে সৌম্য ২২ বলে করেন ১৫ রান। দলীয় ৩৯ রানের মাথায় ৩ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ফিরিয়ে দেন লাহিরু কুমারা। বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়।

এরপর দলকে টেনে নিতে থাকেন সাব্বির-মুশফিক। ইনিংসের ২৯তম ওভারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফার্নান্দোর হাতে ধরা পড়েন সাব্বির। তার আগে মুশফিকের সঙ্গে ১১১ রানের জুটি গড়েন। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি হাঁকিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে সাব্বির ৫৬ বলে ৭টি চারের সাহায্যে করেন ৬০ রান। দলীয় ১৫০ রানের মাথায় বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেট হারায়।

মুশফিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৬তম ফিফটির দেখা পান। মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি রান আউট হয়ে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন (১২)। দ্রুতই বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজ (২)। ইনিংসের ৩৯তম ওভারে দলীয় ১৯৯ রানের মাথায় বিদায় নেন মুশফিক। তার আগে ৮৬ বলে পাঁচটি বাউন্ডারিতে করেন ৬৭ রান। একই ওভারে নুয়ান প্রদীপ বোল্ড করেন ২ রান করা শফিউল ইসলামকে। মোস্তাফিজ ১৪ বলে তিন বাউন্ডারিতে ১৮ রান করে আউট হন।

শেষ ওয়ানডেতে লাসিথ মালিঙ্গা ৯.৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে পান ৩টি উইকেট। নুয়ান প্রদীপ ৩টি, লাহিরু কুমারা একটি এবং ডি সিলভা দুটি উইকেট তুলে নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:- শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩১৪/৮ (আভিশকা ৭, করুনারত্নে ৩৬, কুসল পেরেরা ১১১, মেন্ডিস ৪৩, ম্যাথিউস ৪৮, থিরিমান্নে ২৫, থিসারা ২, ডি সিলভা ১৮, মালিঙ্গা ৬*, প্রদিপ ০*; শফিউল ৯-০-৬২-৩, মিরাজ ৯-০-৫৬-১, রুবেল ৯-০-৫৪-১, মোসাদ্দেক ৭-০-৪৫-০, মুস্তাফিজ ১০-০-৭৫-২, সৌম্য ৫-০-১৭-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-০)

বাংলাদেশ: ৪১.৪ ওভার ২২৩ (তামিম ০, সৌম্য ১৫, মিঠুন ১০, মুশফিক ৬৭, মাহমুদউল্লাহ ৩, সাব্বির ৬০, মোসাদ্দেক ১২, মিরাজ ২, শফিউল ২, রুবেল ৬*, মুস্তাফিজ ১৮; মালিঙ্গা ৯.৪-২-৩৮-৩, প্রদিপ ৯-১-৫১-৩, থিসারা ৬-০-৩৬-০, কুমারা ৭-০-৪৫-১, ডি সিলভা ১০-০-৪৯-২)