বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস কেন

বরিশালে অসংখ্য চর রহিয়াছে। ইহার দখল লইতে দুই পক্ষের লাঠিয়াল বাহিনী মাঝেমধ্যে সম্মুখযুদ্ধে জড়াইয়া পড়ে। একই কায়দায় শনিবার মধ্যরাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক পক্ষ হেলমেটে সজ্জিত হইয়া সশস্ত্রাবস্থায় অপর পক্ষের কবজা হইতে দুইটি হলের দখল লইয়াছে। দখলযজ্ঞে ১২ জন আহত হইয়াছে। নিজ দলের লোকেরাই এই হামলার শিকার হওয়ায় বিরোধী পক্ষ নিশ্চয় পুলকিত হইবে। আলোচ্য ঘটনায় প্রশাসন কী ভূমিকা রাখিয়াছে– তাহাই এখনকার প্রশ্ন।

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন এইরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নাম লেখায়, তখন শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ লইয়া উদ্বিগ্ন হইতেই হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ইহার অন্য সকল শাখার নিয়ন্ত্রক হইবার কথা। কিন্তু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কেন স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী হইল? সমকালে প্রকাশিত সংবাদ ভাষ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষে সংশ্লিষ্ট এক পক্ষ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী। অন্যপক্ষ স্থানীয় সংসদ সদস্য, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির চর্চা অব্যাহত থাকিলে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষ পরিহার অসম্ভব। শুধু ছাত্রলীগ নহে; ছাত্রদলেও অনুরূপ চর্চা দৃশ্যমান। গত মে মাসের শেষে নরসিংদীতে গ্রুপিংয়ের কারণে ২ জনের প্রাণহানি উহার নিকটবর্তী উদাহরণ।

বলা হইয়া থাকে, দানব শিকারে ব্যর্থ হইলে নিজের মাংসই ভক্ষণ করিয়া থাকে। প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠন যথায় নিষ্ক্রিয়, তথায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়াইয়া সহমতাদর্শীদের হাসপাতালে পাঠাইয়াছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নাই। ইহার সাংগঠনিক দায় কেন্দ্রীয় কমিটির উপর বর্তায়। যেই সকল আওয়ামী লীগ নেতা উপদলের পৃষ্ঠপোষক, তাহারাও আলোচ্য অপকর্মের নৈতিক দায় এড়াইতে পারেন না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

যাহারা ক্যাম্পাসে অস্ত্র লইয়া প্রবেশ ও মারধর করিয়াছে, তাহাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে, তাহাও দেখিবার বিষয়। অস্ত্র বহন ও জখম উভয়ই ফৌজদারি অপরাধ। দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠিয়া সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনিতে হইবে। কতিপয় ব্যক্তির অপরাধকে প্রশ্রয় দিতে থাকিলে সংগঠনের অধিকতর বদনাম কেহ ঠেকাইতে পারিবে না।