বন্যায় বিলীন স্কুল স্থানান্তর নিয়ে শিক্ষকদের টানাটানি

কুড়িগ্রামঃ জেলার এক উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় স্থানান্তরের পাঁয়তারা চলছে। বিদ্যালয়টি ভোটকেন্দ্র হওয়ায় সেটি সরিয়ে নিতে একটি প্রভাবশালী মহল তোড়জোড় চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে চরাঞ্চলের প্রায় তিন শতাধিক শিশুর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে এলাকায় বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনটি উত্তর খাউরিয়ার চর গ্রামের পশ্চিম পাশে স্থানান্তর করেন। এসময় পাশের রৌমারী উপজেলার বাসিন্দা ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক এবং আবু হোসেন মোল্লা লোকজন নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্যালয় ভবনের আসবাবপত্রসহ অন্য সরঞ্জামাদি নিয়ে যান। পরে তারা রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়নের চর খেদাইমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে খেদাইমারি গ্রামে ওই বিদ্যালয়ের ঘর নির্মাণ করেন।

এতে করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন ও এক সহকারী শিক্ষক উত্তর খাউরিয়া চরেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিদ্যালয়ের বাকি সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা, লায়লা খাতুন এবং মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে অন্যত্র পাঠদান চলছে। একই বিদ্যালয়ের দুই উপজেলায় দুটি ঘর হওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ওই বিদ্যালয় ও ভোটকেন্দ্র সরে যাওয়ার শঙ্কায় সহস্রাধিকের ওপর ভোটাররাও পড়েছেন বিপাকে।

উত্তর খাউরিয়ার চরের শিশু শিক্ষার্থী বিজয় শেখ, ছাব্বির, শিরিনা বললো, আমরা আমাদের গ্রামেই স্কুল চাই। খেদাইমারি গ্রামে স্কুল হলে আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি শাখা নদী পার হয়ে যেতে হবে। এতে করে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে।

একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদ্যালয়টি আমাদের চরে ছিল। এখানেই পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এটা আমাদের ভোটকেন্দ্র। আমাদের শিশু সন্তানরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য উপজেলায় গিয়ে কেন পড়াশোনা করবে?

তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক তাদের সুবিধার্থে এখানকার বিদ্যালয় অন্যত্র নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। এছাড়া বিদ্যালয়টি ভোটকেন্দ্র হওয়ায় নিজেদের দখলে রাখতে নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান এবং ইউপি সদস্য মইনুল ইসলাম চিলমারী উপজেলার বিদ্যালয়টি রৌমারী এলাকায় নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন।

বিদ্যালয়েরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন বলেন, স্কুলটি ভেঙে যাওয়ার পর খাউরিয়া চরের বাসিন্দা মোন্নাফ মিয়ার বাড়িতে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি। এছাড়া বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে রৌমারী উপজেলার খেদাইমারি গ্রামে টিনসহ অন্য আসবাবপত্র নিয়ে গেছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের বিষয়ে তিন সহকারী শিক্ষক আমাকে কিছু না জানিয়েই টিনসহ আসবাবপত্র রৌমারীতে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। আমাদের এলাকার স্কুল আমাদের এখানেই পুনর্নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি।

নয়ারহাট ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনসাব আলী বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বললে, তিনি আমার সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেছেন। শুধুমাত্র ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য স্কুলটি অন্য উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।

সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়টি রৌমারী উপজেলার সীমানায় প্রায় ৩৩ বছর থেকে ছিল। বর্তমান নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করেছেন।

নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। পরে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনের অনুরোধে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সুবিধাজনক স্থানে একটি ঘর তোলা হয়েছে। পানি কমে গেলে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণ করা হবে।

চিলমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ সরকার বলেন, সাময়িকভাবে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য অন্য উপজেলায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পানি কমে গেলে উত্তর খাউরিয়া এলাকাতেই বিদ্যালয়ের নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, এক উপজেলার বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/০৮/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়