ফেনীঃ কোমলমতি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নিরাপদ জায়গা হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। তবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অধ্যয়ন করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে দিন পার করছে ফেনী পৌর এলাকার তাকিয়া বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত ক্রাশিং মেশিন এবং মসলা গুঁড়ার গন্ধে নাজেহাল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। মাঝে মাঝে বাতাসে ভেসে আসা মসলা গুঁড়ার গন্ধে রীতিমতো দম বন্ধ হয়ে যায় তাদের। এ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।
দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়াসমিন আক্তার বলেছে, বিদ্যালয়ে এলেই যে শুধু এই অবস্থা হয় এমন নয়, আমাদের যাতায়াতেও প্রতিনিয়ত এ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে মুখোশ বাধলেও তেমন সুফল পাই না।
এদিকে এই পরিবেশে অধ্যয়ন করায় সন্তানদের স্বাস্থ্য নিয়েও শঙ্কিত অভিভাবকরা। মো. জাফর উদ্দিন নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণেই ছেলেকে এ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি করেছিলাম। চাইলেও বাইরের কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারছি না। কিন্তু এখানে ভর্তির পরে ছেলে প্রতিদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর হাঁচি-কাশিসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময় তাকে জোর করে স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে।
রাবেয়া আক্তার নামে আরেক অভিভাবক বলেন, এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না দেখে, তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুর নাহার বলেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় মাঝে মাঝে মসলা গুঁড়ার কারণে দম বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই খুব কষ্টে আছি। এক প্রকার নিরুপায় হয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মততাজ বেগম বলেন, এই সমস্যার কারণে বিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী কমে গেছে। এ ক্ষতি অপূরণীয়। ফেনীর সাবেক জেলা প্রশাসক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকতাকেও বিষয়টি অবগত করেছি। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত একটি সমাধান দেবেন।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের ৩০ শতক জায়গার মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ২৫ শতক নিজেদের দখলে রয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
এদিকে এ পরিবেশে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিবেশে থাকলে কোমলমতি শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। শারীরিকভাবেও নানামুখী ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। এছাড়া সেখানের শব্দদূষণও শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, বিষয়টি অবগত হয়ে সরেজমিনে গিয়ে সার্বিক অবস্থা দেখে এসেছি। মসলার গুঁড়ার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কষ্ট করছে। ফেনী জেলা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেখানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে উভয়পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষক পাঠদান করছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়