ফরম পূরণে বাড়তি টাকা আদায়

চট্টগ্রামঃ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএসসির ফরম পূরণে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। কোচিং ফি ছাড়া বিভিন্ন খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব টাকা আদায় করা হচ্ছে। বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। অতিরিক্ত ফি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অসচ্ছল অভিভাবকরা। অনেকেই ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ধারদেনা করে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মতে, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ফি ২ হাজার ১৪০, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ফি ২ হাজার ২০ টাকা। এর মধ্যে বোর্ড ও কেন্দ্র ফি অন্তর্ভুক্ত।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ফরম পূরণের সময় স্কুলের উন্নয়ন ও কোচিং ফি বাবদ অতিরিক্তসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের বিষয়প্রতি গুনতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। কোথাও কোথাও বিদ্যালয় থেকেই টেস্ট পেপার কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

অভিভাবকরা জানান, স্কুলে টাকা নেওয়ার রসিদ না দিয়েই বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। আবার অনেক স্কুলে নানা খাত দেখিয়ে রসিদে টাকার অঙ্ক লিখে দেওয়া হচ্ছে।

গাছবাড়ীয়া মমতাজ বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর পিতা ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ চন্দনাইশ জোনাল অফিসের গাড়িচালক করিম বলেন, ‘আমার ছেলের এসএসসির ফরমফিলাপের জন্য ৩ হাজার ২৬০ টাকা দিয়েছি। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কারণে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করব।’

একই স্কুলের আরেক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন মিশু বলেন, ‘আমার ছোট বোনের ফরমফিলাপের জন্য ৩ হাজার ১০০ টাকা নিয়েছে।’

এ বিষয়ে অন্তত সাতটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা প্রত্যেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, কোচিং সেবা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের জন্য কিছু টাকা ধরে ফি বাড়ানো হয়েছে।

গাছবাড়ীয়া মমতাজ বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘কোচিং ও উন্নয়ন ফিসহ বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ২৬০ টাকা এবং ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ৩ হাজার ১৪০ টাকা করে নিচ্ছি।’

পূর্ব সাতবাড়িয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা আমাদের নিতে হবে। আমরা তো ফ্রি পড়াতে পারব না।’

এ ছাড়া জাফরাবাদ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিম উদ্দিন, শুচিয়া রামকৃষ্ণ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টিকলু দাশগুপ্ত, কেশুয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম উদ্দিন, ধোপছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক ও হাশিমপুর এম কে ইউ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নোমান শফি অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা বলেন, ‘কেন্দ্র ও বোর্ড ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর কোচিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কোচিং বন্ধ করা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য।’

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিধান নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়