প্রয়োজন ছাড়াই ৭ শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি

চবির বাংলা বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রামঃ প্রয়োজন ছাড়াই সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগের সাত পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দেওয়া এ বিজ্ঞপ্তি আইনের পরিপন্থি ও উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, কোনো বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে সভা করবে প্ল্যানিং (পরিকল্পনা) কমিটি। শিক্ষক প্রয়োজন হলে রিকুইজিশন দেবে এ কমিটি। পরে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল হয়ে রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য দপ্তরে যাবে সিদ্ধান্তের জন্য। এর পরই দেওয়া যাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।

তবে এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাংলা বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উলটো উপাচার্যই শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য বিভাগকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিভাগের শিক্ষকরা বলছেন, ১৭ জন শিক্ষক থাকায় বর্তমানে নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই। পরে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান শুরু হলে নতুন শিক্ষক প্রয়োজন হতে পারে। তারা জানান, অনেক বিভাগ শিক্ষক চেয়েও যেখানে পাচ্ছে না, সেখানে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রশাসনের এরকম বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক ও হীন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তাদের অভিমত, নিয়োগবাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন শিক্ষকই এসবের কলকাঠি নাড়ছেন। প্রার্থীদের আবেদনের যে যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে সেখানেও কারসাজি করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ জানুয়ারি চবির বাংলা বিভাগে স্থায়ীভাবে একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক এবং অস্থায়ীভাবে সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে দুজন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদের বিপরীতে তিনজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম বলেন, তৎকালীন সভাপতির সময় এজেন্ডাভুক্ত করে প্ল্যানিং কমিটির সভায় নতুন শিক্ষকের ব্যাপারে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, নতুন শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। বিষয়টি জানিয়ে বিভাগ থেকে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। এর পরও বিভাগকে না জানিয়ে কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রার্থীদের আবেদনপত্রও বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আযম বলেন, আমাদের বিভাগে আগে সেশনজট ছিল। শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় এখন কোনো জট নেই। এরকম বেশ কিছু সমস্যা আমি সভাপতি থাকাকালে সমাধা হয়েছে। যেহেতু বিভাগ ভালোভাবেই চলছে এবং এই ১৭ শিক্ষকই বিভিন্ন সমস্যার সমাধা করতে পারছি, তাই সিদ্ধান্ত হয়েছিল আমাদের বিভাগে নতুন কোনো শিক্ষক প্রয়োজন নেই।

চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্ল্যানিং কমিটিকে উপেক্ষা করে এ কাজ কেউ করতে পারেন না। এটা স্পষ্ট ’৭৩-এর আইনের লঙ্ঘন। শিক্ষক প্রয়োজন আছে কি-না সেটা প্ল্যানিং কমিটি জানবে। এই সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শিগগির শিক্ষক সমিতির সভা হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে আমরা কী পদক্ষেপ নেব।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, বিষয়টি সামনে আসার পর আমি উপাচার্যকে মৌখিকভাবে বলেছি, আপনি যে পদ্ধতিতে গেছেন সেটা ঠিক নয়। আপনি অন্য একটা পদ্ধতিতে যান। এরপর আর উপাচার্যের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে চট্টগ্রামে যেতে পারছি না। পরে গেলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।

তবে এ বিজ্ঞপ্তিতে আইনের লঙ্ঘন হয়নি বলছেন শিক্ষক নিয়োগ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. হাছান মিয়া। তিনি যুগান্তরকে বলেন, কোনো বিভাগের শিক্ষকের মৃত্যু বা অবসরজনিত কারণে পদ খালি হলে সে পদ পূরণ করতে কর্তৃপক্ষের কাছে তিন মাসের মধ্যে নতুন শিক্ষকের চাহিদা জানানো প্ল্যানিং কমিটির দায়িত্ব। যদি প্ল্যানিং কমিটি তা না করে তাহলে উপাচার্য ক্ষমতাবলে সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিতে পারবেন। ১৯৯৪ সালের একটি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপাচার্যের সে ক্ষমতা আছে। বিভিন্ন সময় উপাচার্যরা এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/০৩/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়