অনজন দাশঃ বাঙালির শৈশব মানেই দাদা-দাদি, নানা-নানি, মা-খালাদের মুখে ঠাকুরমার ঝুলির গল্প শোনা। কতই না মধুর ছিল সেসব দিন। এখন আর সেরকম দেখা যায় না। এখনকার দাদা-দাদি, নানা-নানিরা গল্প শোনানোর সময় পান না। সময় পেলেও তারা তা শোনানোর জন্য কাউকে খুঁজে পান না। কেননা এখন সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ একটু সময় পেলেই টিভিতে সিরিয়াল দেখছে, কেউবা মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটাচ্ছে, কেউবা মোবাইলে গেম খেলছে। তবে শুদ্ধ, সুন্দর ও সমৃদ্ধ জাতিগঠনে বই পড়ার বিকল্প নেই। বই পড়লে শুধু মেধা ও প্রজ্ঞাই বৃদ্ধি পায় না, বরং বই পাঠে শিশু হয়ে ওঠে প্রাণচঞ্চল, সহনশীল ও সহমর্মী। প্রাথমিক শিক্ষাস্তরেই প্রতিটি শিক্ষার্থীর বই পড়ার অভ্যাস রপ্ত করা উচিত। প্রাথমিক শিক্ষা একটি শিশুর জীবনগঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে কারণে শিশুর মানসিক বিকাশ সাধনে, প্রগতিশীল ও জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট সমাজ বিনির্মাণে সব শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করা খুবই জরুরি। পৃথিবীতে বই পড়ার মতো নির্মল আনন্দ আর কিছুতে নেই।
শিশুদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হলে প্রথমে শিক্ষক, অভিভাবকেরও এ চর্চা থাকা জরুরি। বই পড়ার কথা উঠলেই অনেককে বলতে শোনা যায়-সময় কোথায় এত বই পড়ার? অথচ প্রতিদিন আমরা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্ট্রাগ্রাম এবং টুইটারে অনেকটা সময় ব্যয় করি। শিশুর সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য, শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। শিশুদের পিঠে পাঠ্যবইয়ের ভার চাপিয়ে দিয়ে মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার প্রতিযোগিতা তাদের দিনদিন রোবটে পরিণত করছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠাগার স্থাপন করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার চর্চা তৈরি হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন পাঠাগারে গিয়ে শিশুদের বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। কেননা লাইব্রেরি হলো দেশ ও জাতির জন্য জ্ঞানভান্ডারস্বরূপ। মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে লাইব্রেরির ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিভা বিকশিত করতে, আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য সর্বোপরি দেশের উন্নতির জন্য লাইব্রেরির সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান লাইব্রেরিগুলোতে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে।
দেশের প্রতিটি জেলায় পাবলিক লাইব্রেরি থাকলেও বেশির ভাগ উপজেলায় এ মহতি উদ্যোগটি নেওয়া হয়নি। তাই উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট জাতি বিনির্মাণে সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রশাসনের নেতৃত্বে স্থানীয় সবার সহযোগিতায় প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় গড়ে তুলতে হবে এলাকা বা অঞ্চলভিত্তিক লাইব্রেরি, যাতে শিক্ষার্থীরাসহ সব মানুষ বই পড়ার মতো ভালো একটি অভ্যাস রপ্ত করতে পারে।
দেশকে উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ করতে বই পড়ার চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত হয়ে যোগ্য এবং স্মার্ট নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠতে হবে। আজকের শিশুদের হাতে যতবেশি বই তুলে দেওয়া যাবে, তারা তত বেশিই শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বিজ্ঞানচর্চা এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে ঋদ্ধ হয়ে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
লেখকঃ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়