প্রাথমিকে নীতিমালা: নিবন্ধনের শর্ত কঠিন বলছেন মালিকপক্ষ

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নীতিমালার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে বেঁধে দেয়া নিয়ম মেনে নিবন্ধন করতে হবে এসব প্রতিষ্ঠানকে। তথ্যমতে, বর্তমানে ২৬ হাজার ৪৬৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা কিন্ডার গার্টেন স্কুল রয়েছে। এরমধ্যে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান মাত্র ৩২৭টি। আর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে প্রায় ১০ হাজার প্রতিষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এক অনুষ্ঠানে তিন মাসের সময় বেঁধে দিয়ে স্কুল বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন। ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ইতিমধ্যে বিধিমালাটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে আইনি যাচাই-বাছাই (ভেটিং) করে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এটি জারি করা হবে।

সচিব বলেন, ২০১১ সালের বিধিমালা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৯০ ভাগ বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়াই এখনো চলছে। এখন সংশোধিত বিধিমালা জারি করা হবে। ফলে বেসরকারি পর্যায়ের ইংরেজি মাধ্যম বাদে বাকি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো (কিন্ডার গার্টেনসহ) নিয়মনীতির আওতায় আসবে।

তিনি বলেন, আমরা চাইবো ২০২৪ সালের ১লা জানুয়ারির পর থেকে যেন একাডেমিক স্বীকৃতিবিহীন ও নিবন্ধনবিহীন কোনো বেসরকারি বিদ্যালয় না চলে। একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দেবেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে একাডেমিক স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত দেবেন। নিবন্ধন ফি ২০১১ সালের বিধিমালা অনুযায়ীই রাখা হয়েছে।

জানা যায়, এর আগেও কয়েকবার নিবন্ধনের জন্য চাপ দিয়েছিল প্রশাসন। প্রতিষ্ঠান মালিকদের দাবি- শর্তের কারণে নিবন্ধন নিতে পারেনি এসব প্রতিষ্ঠান। মালিকরা বলছেন আমাদের পুনরায় আবেদন করতে হবে কিনা সেটাও স্পষ্ট নয়। তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তর বা বিভাগেরও দাবি জানান।

এসব বিদ্যালয়ে নীতিমালার আওতায় আনার জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৮৪ সালে। তার কয়েক বছর পর ২০০ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনও পায়। ১৯৯১ সালে সেই বিধিমালা পুরোটাই বাতিল করা হয়। ২০১১ সালে আবারো নতুন বিধিমালার আওতায় কেজি স্কুলগুলো নিবন্ধনের জন্য নির্দেশনা জারি করা হয়। তবে নানা জটিলতার কারণে ভেস্তে যায় সেই উদ্যোগ।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী আবেদন ফি মেট্রোপলিটন ও অন্য বিভাগীয় শহরে পাঁচ হাজার, জেলায় তিন হাজার, উপজেলায় দুই হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তিনি উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার (টিইও) যাচাই শেষে তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) কাছে পাঠাবেন। তিনিই প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা চলমান প্রতিষ্ঠান চালু রাখার চূড়ান্ত অনুমতি দেবেন। আবেদন করার ৬০ দিনের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে অনুমোদন বা বাতিল করতে হবে। প্রাথমিক অনুমতির মেয়াদ হবে সনদ দেয়ার পর থেকে এক বছর। এই মেয়াদ শেষ হলে নবায়নের আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। আর তদন্ত ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান নবায়ন করা যাবে না।

নতুন বিধিমালার আওতায় প্রাথমিক অনুমোদনের পর নিতে হবে নিবন্ধন। শহরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত স্কুল নিবন্ধন ফি ১৫ হাজার টাকা। জেলায় ১০ হাজার এবং উপজেলায় ৮ হাজার টাকা। নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভর্তি, উপস্থিতি এবং শিক্ষা সমাপনের হার বিবেচনায় নেয়া হবে। অনুমোদন বা অনুমতি কর্তৃপক্ষ ডিপিইও হলেও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হবেন বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ডিডি)। নিবন্ধনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।

সাজিদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক ও বেসরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মালিক বলেন, আমরা অবশ্যই নীতিমালার পক্ষে। তবে হঠাৎ করেই তিন মাস সময় বেঁধে দেয়াটা আমাদের জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। আমরা চাই আমাদের জন্য সহজ নিয়ম করে দেয়া হোক।

নতুন নীতিমালায়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না ইচ্ছামতো ফি। খাত ও ফি’র হার থাকবে নির্দিষ্ট। সরকার ফি বেঁধে দেবে না তবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সরকারকে অবহিত করতে হবে ফি’র বিষয়ে। এথেকে সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

ইকবাল হোসেন নামে এক মালিক বলেন, প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পাওয়া সকলের জন্যই ভালো। কিন্তু এটি যাতে জটিল আকার ধারণ না করে। নিবন্ধনের জন্য যাতে দরজায় দরজায় ঘুরতে না হয় এই দাবি জানাই।

মালিকপক্ষ বিধিমালায় পাঁচটি শর্ত সহজ করার দাবি জানান। এগুলো হলো- বিদ্যালয়ের জন্য ব্যবহৃত ভূমির পরিমাণ ৮ শতক, ১২ শতক এবং ৩০ শতকের পরিবর্তে পাঁচ শতক অথবা তিন হাজার বর্গফুট ভবনের বাড়ি ভাড়া নেয়ার বিধান রাখা। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাখার পরিবর্তে সরকারি কর্মচারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী রাখা। নিবন্ধন ফি কমানো। সংরক্ষিত তহবিলে ১ লাখ, ৭৫ হাজার এবং ৫০ হাজার টাকা রাখার বিধান করা হয়েছে। এই টাকা কমিয়ে ২০১১’র বিধিমালায় উল্লিখিত টাকার পরিমাণ রাখার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া ব্যক্তি নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত তহবিলে ৫ লাখ টাকার বিধান রাখা হয়েছে। এটাও কমিয়ে ৩ লাখ টাকা রাখার দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান সরকার বলেন, আমরাও প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের পক্ষে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের দাবি হলো- যেসব শর্তের আলোকে নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে সেখানে কিছু বিষয় কঠিন ও অবাস্তব। আমরা এই কঠিন ও অবাস্তব শর্তগুলো বাতিল চাই।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০৯/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়