প্রাথমিকের ১১ শিক্ষক বরখাস্ত

অনলাইন ডেস্ক :

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৩২ জনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আট জনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার দুপুরে নেত্রকোনা সিনিয়র জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালত-১ এর বিচারক শরিফুল হক এ আদেশ দেন।

শিক্ষক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, সাময়িক বরখাস্ত ১১ জনের মধ্যে তিন জন প্রধান শিক্ষক ও বাকি আট জন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। তারা সরকারি চাকরি বিধি ভঙ্গ করে অপরাধে জড়িয়ে কারাগারে আছেন। এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বরখাস্তকৃত ১১ শিক্ষক হলেন- কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ছোটন, বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাকি ও পানগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুহিন আক্তার, কেন্দুয়া উপজেলার দিগদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মজিবুর রহমান, নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাওয়া বেগম, লিপা মুনালিসা, বলাইশিমুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরিয়ম আক্তার, কেন্দুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিনা আক্তার, মদন উপজেলার জঙ্গলটেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জেবুন্নাহার ডলি, খাগরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাকি আক্তার ও আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্মৃতি খানম।

পুলিশি হেফাজতে যাদেরকে দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ছোটন, নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজহারুল ইসলাম, শরিফুজ্জামান ভূইয়া মিন্টু, দিগদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষক মজিবুর রহমান, বিকাশ দে, জুয়েল মিয়া, আবুল বাশার, বিলাস সরকার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার এসআই আবুল বাশার জানান, চক্রটির সঙ্গে জড়িত আছে এমন আরও অনেকের নাম তদন্তে বেড়িয়ে আসছে। এ সব যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

গত শুক্রবার সকালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে উপজেলার টেংগুরি এলাকার ব্যবসায়ী শামীমের বাড়ি থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ৯৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে মামলা করে। পরে শনিবার বিকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে পুলিশ।

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহাজাহান মিয়া জানান, চক্রটি পরীক্ষার হলে পরির্দশক ও বাইরে থেকে বিভিন্ন ডিভাইস, মোবাইলফোন ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষায় অনিয়মে জড়িত। পরীক্ষার হলে পরির্দশক হিসেবে থাকা এই চক্রের সদস্যরা পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশ্নপত্র বাইরে তাদের অন্য সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দিতো। বাইরে থাকা চক্রের অন্যরা দ্রুত প্রশ্নের উত্তর লিখে আবার সেই পরির্দশকদের কাছে একইভাবে পাঠিয়ে দেয়। পরে তারা তাদের নির্দিষ্ট পরীক্ষার্থীদের তা সরবরাহ করে এবং পাশে দাঁড়িয়ে থেকে উত্তর লিখতে সহযোগিতা করে। এভাবে তারা একেক পরীক্ষার্থীকে অন্তত ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পাইয়ে দেয়। এরা পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে এভাবে প্রশ্ন ফাঁস করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। একেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে তারা চার থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়ে আসছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইলফোন, ডিভাইস, প্রিন্টার জব্দ করে।