প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন বাড়লে কেউ অন্য চাকরি খুঁজতেন না
নারী সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত ফারজানা ইয়াসমিন
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন ফারজানা ইয়াসমিন। সুনামগঞ্জ সদরের রংগারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন তাঁর হাতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পদক তুলে দেন। পদকপ্রাপ্তি ও প্রাথমিকের শিক্ষকতা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে কথা বলেছেন ফারজানা ইয়াসমিন।
শ্রেষ্ঠ নারী সহকারী শিক্ষক নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। সবার কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছেন, কেমন লাগছে?
ফারজানা ইয়াসমিন: পদকপ্রাপ্তি অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। কাজের উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে পদক যে পাব, এটা ভাবিনি। শিশুদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করি, ক্লাসে সব শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করি। আমার পদকপ্রাপ্তিতে উপজেলার প্রায় সবাই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, এটি অনেক ভালো লেগেছে।
কত দিন ধরে প্রাথমিকে শিক্ষকতা করছেন?
ফারজানা ইয়াসমিন: সিলেট এমসি কলেজ থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০৬ সালে প্রাথমিকে যোগ দিই। প্রথম দিকে ক্লাস নিতে ভালো লাগত না। পরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মেশার পর বুঝতে পারলাম পড়ানো আসলে মজার। এরপর আর কখনো ক্লাস নিতে বিরক্ত লাগেনি।
প্রাথমিকে চাকরির ১৬ বছর পূর্ণ হলো আপনার। প্রাথমিকে নতুন যেসব শিক্ষক যোগ দেন, এ ১৬ বছরে তাঁদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে পান কি?
ফারজানা ইয়াসমিন: কিছুটা পরিবর্তন তো অবশ্যই আছে। আগে এসএসসি পাস হলেই মেয়েরা এ পেশায় আসতে পারতেন। এখন অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা শিক্ষক আসছেন। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছ থেকে নিত্যনতুন বিষয় শিখছে। তবে ১৬ বছর আগে যখন প্রথম আসি, তখন দেখতাম, প্রাথমিকে যোগ দিয়ে শিক্ষকেরা অন্য চাকরি খুঁজতেন। ১৬ বছর পরও একই অবস্থা। এখন যাঁরা নতুন আসছেন, তাঁরাও প্রাথমিকে যোগ দেওয়ার পর থেকে অন্য চাকরি খোঁজা শুরু করেন।
প্রাথমিকে যোগ দিয়ে অন্য চাকরি খোঁজার প্রবণতা কেন?
ফারজানা ইয়াসমিন: প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদটি এখনো ১৩তম গ্রেডভুক্ত। মূল বেতন মাত্র ১১ হাজার টাকা। পদোন্নতির তেমন সুযোগ নেই। সহকারী শিক্ষকদের বেতন–ভাতা বৃদ্ধি ও পদোন্নতির সুযোগ থাকলে এখানে আসার পর কেউ অন্য চাকরি খুঁজতেন না।
শিক্ষকতা কেমন উপভোগ করেন?
ফারজানা ইয়াসমিন: শিক্ষকতা মহান পেশা। এটা জেনে এ পেশায় আসিনি। প্রাথমিকে চাকরি করতে করতে শিশুদের সঙ্গে মেশার পর বুঝতে পেরেছি শিক্ষকতা পেশাটি আসলেই মহান পেশা। পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীর সঙ্গে রাস্তাঘাটে দেখা হলে যখন বলে, ম্যাডাম, বিষয়টি আপনার কাছ থেকে শিখেছি, তখন নিজের জন্য গর্ব হয়, অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে। এ ভালোলাগাটুকু জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। আমার বাসা থেকে স্কুলে যেতে সারা বছরই নৌকায় সুরমা নদী পার হতে হয়। ১৬ বছর ধরে কষ্ট করে নৌকায় স্কুলে যাচ্ছি। তারপরও শিক্ষকতা উপভোগ করে যাচ্ছি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়