প্রশিক্ষণের অর্থ হাতিয়ে নিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা

শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষকদের শিক্ষাক্রম বিস্তরন বিষয়ক পাঁচদিনের প্রশিক্ষণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত শিক্ষা উপকরণ, সকাল-বিকাল নাস্তা খরচ, ভেন্যু ব্যবস্থাপনা, অফিস সহকারীর ভাতা ও সুপার সার্ভিসের ভাতা প্রদানে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এমন সব অভিযোগ বাউফল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হকের বিরুদ্ধে।

গত ৬, ৭, ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি মোট পাঁচদিন বাউফল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ওই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ফোল্ডার, কলম ও প্যাড ক্রয় বাবদ দুইশ টাকা করে ছয়শ ৯৬ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য মোট সরকারিভাবে এক লক্ষ ৩৯ হাজার আটশ টাকা বরাদ্দ ছিল। অথচ প্রতি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ৫০ টাকা। যার মধ্যে ছিল- নিম্ন মানের ৩০ টাকা দামের ফোল্ডার, পাঁচ টাকা দামের কলম ও ১৫ টাকা দামের প্যাড।

হিসেব অনুযায়ী- প্রতি প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ভ্যাট বাদে একশ ৩৫ টাকা। সে হিসেবে ছয়শ ৯৬ জন প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট বাদে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৯৩ হাজার নয়শ ৬০ টাকা।

সকালে ও বিকালে প্রতি প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীর জন্য প্রতি শিফটে সরকারিভাবে ৮০ টাকা করে সাতশ ৪৬ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য মোট তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রতিজনের মাথাপিছু ৪১ টাকা ব্যয় করা হয়। সে হিসেবে সাতশ ৪৬ জনের নাস্তা বাবদ ৩৯ টাকা করে আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ ২৯ হাজার ৯৪ টাকা।

ভেন্যু ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারিভাবে ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কোনো অর্থ খরচ না করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

অফিস সহকারী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে প্রতিদিন উপস্থিত থাকা স্বত্বেও তাকে ট্রেনিং সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা হয়নি এবং কোনো ভাতা দেয়া হয়নি। ফলে অফিস সহকারীর জন্য বরাদ্দকৃত ছয় হাজার টাকা পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এমএলএসএস ১৩ জনের জন্য বরাদ্দ ৩২ হাজার পাঁচশ টাকা। কিন্তু ভাতা দেয়া হয়েছে মাত্র সাতজনকে। এক্ষেত্রে আত্মসাতের পরিমাণ ১৫ হাজার টাকা। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সর্বমোট বরাদ্দ পাঁচ লক্ষ ৩৩ হাজার তিনশ টাকা। ব্যয় করা হয়েছে তিন লক্ষ ৩৪ হাজার দুইশ ৪৬ টাকা। অবশিষ্ট এক লক্ষ ৯৯ হাজার ৫৪ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রশিক্ষণ নেয়া কেশবপুর ফজলুল হক ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক মো. ইউসুফ আলম বলেন, আমরা শিক্ষা বিস্তরনের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছি। অর্থের জন্য নয়। তবে প্রশিক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কত টাকা বরাদ্দ ছিল আমার জানা নেই। তবে আমাদেরকে নিম্নমানের উপকরণ ও নাস্তা দেওয়া হয়েছে।

বাউফল পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ড বাংলা বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মীম কসমেটেকসের স্বত্বাধিকারী মো. সেলিম বলেন, প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে বিতরণ করা শিক্ষা উপকরণের মধ্যে ফোল্ডারের পাইকারি মূল্য ২৫ টাকা, কলমের দাম পাঁচ টাকা ও প্যাডের মূল্য ১০ টাকা।

প্রশিক্ষণের ভেন্যু বাউফল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. নার্গিস আখতার জাহান বলেন, আমাকে কোনো ধরনের ভাড়া টাকা (ভেন্যু) পরিশোধ করা হয়নি। আমি জানিও না ভাড়া বাবদ কোনো বরাদ্দ ছিল কি-না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে ওই প্রশিক্ষণের যাবতীয় সবকিছু জেলার কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় মনিটরিং করেছেন। আমার কোনো অনিয়ম থাকলে তাদের নজরে আসতো।

তিনি আরও বলেন, ট্রেজারির মাধ্যমে সকল টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। যে পরিমাণ টাক খরচ হয়েছে সে পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হবে বাকি টাকা সরকারি সংশ্লিষ্ট ফান্ডে জমা হয়ে যাবে। এখানে অনিয়মের কিছু নেই।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/৩১/২৩