কুড়িগ্রামঃ জেলার ভুরুঙ্গামারীতে আব্দুল করিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে উঠেছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। অভিভাবকরাও তাদের ছেলে-মেয়েদের স্থানীয় মাদরাসায় ভর্তি করছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছাত্তারের বিরুদ্ধে উঠেছে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মসহ নানা অভিযোগ। এ ছাড়াও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বহীনতার কারণে সহকারী শিক্ষক মোছা. রুমি খাতুন, মোছা. সুলতানা পারভীন, মোছা. নাসরিন নাহার ও মোছা. রহিমা খাতুন দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত উপস্থিতি ছিলেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেছড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড চারদিক দুধকুমার নদীবেষ্টিত পাইকডাঙ্গা চরাঞ্চলের শিক্ষানুরাগী আব্দুল করিমের উদ্যোগে ও তার জমিতে ২০১২-১৩সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আব্দুল করিম (১৫০০) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুল শুরুর দিকে চরাঞ্চলের অনেক ছেলে-মেয়ের উপস্থিতি ছিল। ২০১৭সাল থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছাত্তারের দায়িত্বহীনতা ও অনিয়মের কারণে সহকারী শিক্ষক মোছা. রুমি খাতুন, মোছা. সুলতানা পারভীন, মোছা. নাসরিন নাহার ও মোছা. রহিমা খাতুন স্কুলে অনিয়মিত উপস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের অল্প সময় পাঠাদান ও প্রায় দিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিশু থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাত্র ২০জন থেকে ৩০জন। বিদ্যালয় অচল থাকার কারণে অভিভাবকরা তাদের শতাধিক ছেলে-মেয়েদের স্থানীয় ৪টি মাদরাসায় লেখাপড়া করাচ্ছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় তথ্য সংগ্রহে আব্দুল করিম (১৫০০) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল পুরোপুরি বন্ধ এবং প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছাত্তার ও সহকারী শিক্ষক মোছা. রুমি খাতুন, মোছা. সুলতানা পারভীন, মোছা. নাসরিন নাহার ও মোছা. রহিমা খাতুন বিদ্যালয়ে আসেননি। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে পড়তে এসে ফিরে যায় বাড়িতে। এদিকে সংবাদকর্মীর তথ্য পেয়ে দুপুর ১টা ৩০মিনিটে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছাত্তার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমাদের ভুল হয়েছে। প্রধান শিক্ষক তার কক্ষ খোলা মাত্র শিক্ষক হাজিরা খাতা ৫ সেপ্টেম্বরের ছবি নেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছাত্তার বলেন আমি ব্যাংকে বিল তোলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সহকারী শিক্ষকদের বিদ্যালয় খুলতে বলেছি কিন্তু তারা স্কুলে আসেননি। এ স্কুলে চারজন মহিলা সহকারী শিক্ষক এটাই সমস্যা এবং তারা আমাকে কোনো মূল্যায়ন করে না।
সম্প্রতি আব্দুল করিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত এবং ছাদঢালাই একটি বিল্ডিং ঘর নির্মাণ হয়। বর্তমানে সভাপতি আব্দুল করিম ও প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের সংখ্যা ৫জন এবং প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণিতে ২০ জন থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে বিদ্যালয়। পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে নিভু নিভু করে কোনো রকমে চলছে স্কুল। চলতি অর্থবছরের সরকারি বরাদ্দকৃত স্লিপ ৭০হাজার, প্রাক ১০হাজার ও বিদ্যালয় সজ্জিতকরণ ১০হাজার টাকার কাজ না করেই সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক। এমনকি দীর্ঘ তিন বছর থেকে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থের কোনো কাজই করে না এ অভিযোগ স্থানীয়দের।
ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষানুরাগী মহলের অভিযোগ, ভুরুঙ্গামারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জ্যোতির্ময় চন্দ্র সরকার যোগদান করার পর থেকে তার অসুস্থতা, অদক্ষতা ও অনিয়মে উপজেলায় ১২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্য অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার অবস্থা বেহাল ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত।
আলমগীর হোসেন (নৌকা মাঝি) নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছাত্তারের অনিয়মের কারণে সহকারী শিক্ষকরা স্কুলে আসেন না ও লেখাপড়া হয় না।
চর পাইকডাঙ্গা এলাকার আশরাফুল আলম, শুক্কুর আলী, ফজর আলীসহ অনেকে বলেন, প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছাত্তার ও সহকারী শিক্ষকরা স্কুলে আসেন না ও লেখাপড়া হয় না। তাই বিদ্যালয়টি অচল। বিদ্যালয় অচল থাকার কারণে অভিভাবকরা তাদের শতাধিক ছেলে-মেয়েদের স্থানীয় চারটি মাদরাসায় লেখাপড়া করাচ্ছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি।
ভুরুঙ্গামারী উপজেলা শিক্ষা প্রাথমিক অফিসার জ্যোতির্ময় চন্দ্র সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেরি।
ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। যে সকল তথ্য, ভিডিও প্রমাণ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নবেজ উদ্দিন সরকার বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম ও গত ৫ সেপ্টেবর বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করেন। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়