সাতক্ষীরাঃ জেলার আশাশুনি উপজেলার গাজীপুর কুড়িগ্রাম ইসলামিয়া সিদ্দিকিয়া আলিম মাদ্রাসার সুপার মিজানুর রহমান নাশকতাসহ কয়েকটি মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তিনি পলাতক। তবে মাদ্রাসায় না গিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাদ্রাসায় অবস্থান করেও মিজানুর রহমানকে মাদ্রাসায় পাওয়া যায়নি। চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার দায়িত্বেও নেই তিনি। এ সময় শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখতে চাওয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হন অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিজানুর রহমান ২০১৮ সালে এ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, দখলবাজি, এতিমের টাকা আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নাশকতার মামলা বিচারাধীন। বর্তমানে কাকড়াবুনিয়া গ্রামের আজিজুর রহমানের করা ঘের দখল মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। এরপর থেকে পালিয়ে থাকলেও তিনি নিয়মিত হাজির দেখিয়ে নিচ্ছেন বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা। তবে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও তিনি পালিয়ে থেকে নিয়েছেন বেতন-ভাতা।
অভিভাবক শামিম হোসেন বলেন, ‘মাদ্রাসার সুপার আমার প্রতিবেশী। তিনি প্রায়ই বাইরে থাকেন।’
এদিকে মাদ্রাসার সুপার মিজানুর রহমান প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক মো. তানজিল আরাফাত বলেন, ‘আমার জানা মতে, সুপার অফিসিয়াল কাজে ম্যানেজিং কমিটির কাছ থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় আছেন। ছুটির দরখাস্ত ম্যানেজিং কমিটির কাছে আছে।’ তবে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।
একই কথা বলেছেন মাদ্রাসার সহকারী সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম । তিনি বলেন, ‘সুপার মাঝেমধ্যে অফিসিয়াল দায়িত্বে বাইরে থাকেন। মাঝে খুলনায় গিয়েছিলেন রেজিস্ট্রেশন কার্ড আনতে। ঢাকায় গিয়েছিলেন শিক্ষকদের বেতন ভাতার জন্য। এখন কয়দিন ছুটিতে আছেন। এই দুই তিন দিন দরখাস্ত দিয়ে গেছেন।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না এসে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ, সুপার হুজুরের ম্যানেজিং কমিটির কাছে ছুটি নেওয়া আছে।’
তবে এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রেজাউল মোড়ল বলেন, ‘মাদ্রাসার কোনো বিষয়ে আমার সঙ্গে কেউই যোগাযোগ করে না। সবার যা ইচ্ছে তাই করে। আমি অসুস্থ বিধায় ওদের ধরতে পারি ন।’ ছুটির দরখাস্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছুটির বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেনি, দরখাস্তও করেনি, মাদ্রাসার সুপার ইচ্ছেমতো সব করে বেড়ান। আমি সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি, আপনারা আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’
এসব বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার শাহাজাহান কবীর বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযুক্ত মাদ্রাসার সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘গ্রামের একটি মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে চায়ের দোকানদার মাসুম বিল্লাহর উসকানিতে আমার নামে পৃথক দুটি মামলা করে, দুটি ঘটনাতেই আমাকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলা দুটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আমাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয় কিন্তু বাদী পক্ষ নারাজি প্রদান করে নতুন তদন্তে ব্যাপক অর্থ দিয়ে আমাকে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করে ওয়ারেন্ট জারি করায়। আমি মাদ্রাসার প্রশাসনিক কাজে বাইরে অবস্থান করছি এবং বিজ্ঞ আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার চেষ্টা করছি। এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত নানানভাবে আমাকে এবং আমার পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য উঠেপড়ে লেগে আছে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়