মিলন জ্যোতি চাকমাঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে না আছে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক, না আছে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা, আর না আছে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার প্রথম স্তর প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানেই যদি সে পর্যাপ্ত শিক্ষার সুবিধা না পায় তাহলে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নিজেকে কতটুকু খাপ খাওয়ানো সম্ভব?
আমার কথাই ধরা যাক। লংগদুর দুর্গম এলাকার কলাবুনিয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল আমার প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরণ হয়েছে। সে সময় সেখানে মাত্র তিনজন শিক্ষক ছিলেন–সবাই ছিলেন নারী। তিনজন শিক্ষককে পাঁচ ব্যাচের শিক্ষার্থীর পাঠদানে রীতিমতো হিমশিম খেতে হতো। বাসা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার দুর্গম পথ হেঁটে যেতে হতো স্কুলে। ছিল না পর্যাপ্ত পাঠদানের ব্যবস্থা। তারপরও কোনোমতে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পাড়ি দিয়ে ভর্তি হলাম লংগদুর কাট্টলী এলাকার কাট্টলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে পৌঁছতেও দেড় ঘণ্টা লেগে যেত। ওখানে আবার কিছু পথ হেঁটে এবং কিছু পথ নৌকায় যেতে হতো। ছিল না পর্যাপ্ত শিক্ষক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। আমার জেএসসির ফল ভালো হওয়ায় নবম শ্রেণিতে সবাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে উৎসাহ দিল। আমিও ভর্তি হলাম সায়েন্সে। কিন্তু তারপর বাধল আরেক বিপত্তি।
বিজ্ঞানের ছাত্রদের পড়ানোর জন্য শিক্ষক নেই। একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন, তিনিও চলে যান। কিছুদিন পরে আরেকজন শিক্ষক আনা হলো। কিন্তু তিনিও বেশিদিন টিকলেন না। কয়েক মাস থাকার পর সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে চলে গেলেন অন্য জায়গায়। এরপর ওই স্কুলের প্রাক্তন দু’জন শিক্ষার্থী দিয়ে পড়িয়ে আমাদের কোনোভাবে পার করিয়ে দেওয়া হলো। তারাও সবে এইচএসসি পাস করেছিল। এই ছিল আমাদের সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা। এখন অবশ্য একজন স্থায়ী শিক্ষক এসেছেন বিজ্ঞানের জন্য। কিন্তু যখন জেএসসি বা এসএসসি ফলাফল প্রকাশিত হয়, দেখি এখনও কোনো উন্নতি নেই।
স্কুলে সায়েন্সটা ভালোভাবে বুঝতে না পারায় এইচএসসিতে কমার্সে ভর্তি হলাম। ভর্তি হওয়ার পর ক্লাসে গিয়ে দেখি কিছুই বুঝি না। সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে প্রাইভেট শিক্ষকের শরণাপন্ন হতে হয়। এভাবেই কলেজ জীবন পার করে ভর্তি হলাম কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আমি চাই পার্বত্য চট্টগ্রামের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক। চলমান শিক্ষা বৃত্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা যেন এসব সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থী: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়