পলাশে প্রবিধিমালা লঙ্ঘন করে বাতিল সভাপতির পিতাকে সভাপতি নির্বাচিত!
খুদি মাহমুদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়
আল আমিন হোসেন মৃধা, ঢাকাঃ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার খুদি মাহমুদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে এক সহকারী শিক্ষিকা শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় সেই কমিটির সভাপতিকে অব্যাহতি দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির অবশিষ্ট সময়ের জন্য নতুন সভাপতি নির্বাচিত করে বোর্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর আবারও অনিয়ম ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে সভাপতি নির্বাচন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পত্র ইস্যুর সাত কর্মদিবসের মধ্যে সভাপতি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ১৫ দিন পর নির্বাচন করা, স্ব স্ব বিদ্যালয়ে সভাপতি নির্বাচনের সভা করার কথা থাকলেও প্রিজাইডিং কর্মকর্তার (উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা) কার্যালয়ে করা, একাধিক মামলার আসামীকে সভাপতি করাসহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ মে বিদ্যালয়ের পূর্বের সভাপতি আরিফুল হাসান (মাদক সহ একাধিক মামলার আসামী) কর্তৃক বিদ্যালয়টির নারী শিক্ষিকা নূরজাহান আক্তারকে শারিরীক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাউশি কর্তৃক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে থাকা আরিফুল হাসান এর সভাপতি পদটি বাতিল করে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নতুন সভাপতি নির্বাচিত করে বোর্ডে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে চিঠি ইস্যু করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধিমালা মোতাবেক, ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের পর সাত কর্মদিবস কিংবা সভাপতি পদ শূন্য হলে বোর্ড কর্তৃক সভাপতি নির্বাচিত করার জন্য পত্র ইস্যুর দিন থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সভাপতি নির্বাচিত করে বোর্ডে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও ঢাকা বোর্ড কর্তৃক ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নতুন সভাপতি নির্বাচিত করে বোর্ডে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে চিঠি ইস্যু করা হলেও ১৫ দিন পর অর্থ্যাৎ গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে এই সভাপতি নির্বাচনী সভা করে সভাপতি নির্বাচিত করে অনুমোদনের জন্য বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনসহ সকল সভা স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবার কথা প্রবিধিমালায় সুস্পষ্ট করে উল্লেখ থাকলেও খুদি মাহমুদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অবশিষ্ট মেয়াদকালীন সভাপতি নির্বাচনী সভা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে (উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) অনুষ্ঠিত হয়। যা প্রবিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
জানা গেছে, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনসুর ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অত্র বোর্ডের আওতাধীন নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এস.আর.ও নং- ১৯-আইন/২০০৯ তারিখ ০৮/০৬/২০০৯ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- শিম/শাঃ১১/১৩(আইডিএ)-৩/২০০৩ (অংশ) /৬০৮ তারিখ- ০৮/০৬/২০০৯ অনুযায়ী প্রবিধানমালা ২০০৯ এর প্রবিধি ৩৫ (১) মোতাবেক “সকল সভা সংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হইবে” মর্মে উল্লিখিত রয়েছে। প্রায়শই দেখা যায় নির্বাচনের পর সভাপতি নির্বাচনের সভা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে না করে প্রিজাইডিং অফিসারের কার্যালয়ে করা হয়- যা উল্লিখিত বিধি পরিপন্থী। ফলশ্রুতিতে মামলা মোকদ্দমাসহ কমিটি অনুমোদনে বিঘ্ন ঘটছে। এমতাবস্থায়, প্রিজাইডিং অফিসার এবং সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উক্ত বিধি অনুসরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। উক্ত বিধি অনুসরণ না করলে কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামী খুদি মাহমুদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সদ্য সভাপতি পদ বাতিল হওয়া আরিফুল হাসান তার পিতাকে (যিনিও মাদক,খুন সহ একাধিক মামলার আসামী) সভাপতি নির্বাচিত করে শিক্ষা বোর্ডে অনুমোদনের জন্য পাঠান। যিনি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাসহ একাধিক অভিযোগে সভাপতি পদ হারালেন তিনি সভাপতি নির্বাচনে উপস্থিত থেকে নিজের পিতাকে সভাপতি (যিনিও মাদক সহ একাধিক মামলার আসামী) বানালেন তা কতোটা গ্রহণযোগ্য প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুদি মাহমুদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলাম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, গত ২৬ তারিখে প্রিজাইডিং অফিসারের কার্যালয়ে নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকল সদস্যদের ঐক্যতমত্যের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। অন্য কোনো প্রার্থী ছিল না। সভাপতির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এলাকাবাসী বানিয়েছে তিনি এর বেশি কিছু জানেন না।
জানতে চাইলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পলাশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিলন কৃষ্ণ হালদার শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, গত ২৬ তারিখে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে আমার কার্যালয়ে সভাপতি নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় সর্ব সম্মতিক্রমে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত সভাপতির নামে মামলা থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা প্রধান শিক্ষকের দেখার বিষয় আমার জানা নেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারের কার্যালয়ে নির্বাচনের সুযোগ নেই। যার অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের ফলে কমিটির সভাপতি পদ হারালেন তার পিতাকেই সভাপতি নির্বাচিত করা প্রশ্নের জন্ম দেয়। তিনি বলেন, এছাড়াও এই কমিটি নিয়ে একাধিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আমরা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে এডহক কমিটি গঠনের চিঠি ইস্যু করব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়