চুয়াডাঙ্গাঃ জেলায় পরীক্ষার হলে অন্যের উত্তরপত্র দেখে লেখার সময় খাতা কেড়ে নেয়ায় সবার সামনে শিক্ষকের দুই গালে চড় মেরেছে সাইফুল আমিন নামে এক ছাত্র। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রবিবার(০৮ অক্টোবর) রাতে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন আক্তারকে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে।
রবিবার (০৮ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত ছিলেন দিবা শিফটের বাংলার সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান। রোববার সকাল ১০টায় হিসাব বিজ্ঞান পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা ১১ মিনিটের সময় পরীক্ষার্থী সাইফুল আমিন অন্যের উত্তরপত্র দেখে লিখছিল। প্রথমে তাকে নির্ধারিত আসন থেকে সরিয়ে সামনের বেঞ্চে বসানো হয়। এরপরও সে পেছনে ঘুরে অন্যের উত্তরপত্র দেখে লিখতে ছিল। এছাড়াও পেছনের শিক্ষার্থীকে বিরক্ত করছিল।
বিষয়টি দেখে দায়িত্বরত শিক্ষক সাইফুলের খাতা নিয়ে টেবিলের ওপর রাখেন। এরপর দুই জনের মধ্যে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়। শিক্ষক ওই ছাত্রকে বেঞ্চে বসার জন্য বললে সে কয়েক মিনিট তার নির্ধারিত আসনে বসে থাকে। এরপর বেঞ্চ থেকে উঠে এসে শিক্ষকের দুই গালে চড় মেরে বাইরে চলে যায়। বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে শিক্ষকের গালে চড় মারার বিষয়টি সবার নজরে আসে। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমার সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি অবহিত করেন।
এরপর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন আক্তারকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিছুজ্জামান লালন, জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান ও ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান। তিন কার্য দিবসের ভেতরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররা বলেন, ‘এটি একটি জঘন্যতম ঘটনা। ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ স্কুলে পড়াশোনা করেছি। শিক্ষকদের সঙ্গে কখনও বেয়াদবি করেনি। শাস্তি ছাড়া কোনো সমাধান নেই।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, ‘ক্লাসে যাওয়ার মতো পরিবেশ চাই আমরা। ছাত্র এমন আচরণ করবে তা আমরা কখনও ভাবিনি। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সদর থানায়। অভিযোগটি ক্রটিপূর্ণ থাকায় সংশোধন করে আনার জন্য বলা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন একজন শিক্ষককে এক ছাত্র লাঞ্ছিত করেছে। বিষয়টি আমরা আমাদের অভিভাবক জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আইনি ব্যবস্থা নেবেন।’
জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাদের লিখিত দিয়েছে। চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। প্রতিবেদন পেলে তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একাডেমিক বিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থা নেবে। দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত, পরবর্তী করণীয় ও বিষয়গুলো যেভাবে উঠে আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়