পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তলানি থেকে ৩য়,পেছালো ১৫ ধাপ

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরিবেশ সুরক্ষা এজেন্সি (ইপিআই) থেকে চলতি সপ্তাহে ওই বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দেশটির এমসিকল ম্যাকবেইন ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা প্রতিবেদনটি তৈরি করেন। দুই বছর পরপর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। চলতি তালিকায় পরিবেশ সুরক্ষায় শীর্ষে থাকা পাঁচটি দেশ হচ্ছে ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, মাল্টা ও সুইডেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ২০তম।

দেশের পরিবেশদূষণ এতটাই দৃশ্যমান যে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা না বললেও আমরা বুঝতে পারি।

সাবের হোসেন চৌধুরী, সভাপতি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশের এক ধাপ ওপরে রয়েছে পাকিস্তান, নিচে রয়েছে যথাক্রমে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আফগানিস্তান। এবার ৮১তম অবস্থানে উঠে এসেছে দেশটি। ২০২০ সালে তাদের অবস্থান ছিল ১৭৮-এ। এ ছাড়া এবার ভুটান ৮৫তম, মালদ্বীপ ১১৩তম, শ্রীলঙ্কা ১৩২তম ও নেপাল ১৬২তম অবস্থানে রয়েছে।

ইপিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিকার নিচের দিকে থাকা দেশগুলো দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দ্রুত উন্নয়ন করতে গিয়ে তারা পরিবেশের ক্ষতি করছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বায়ু ও পানির। সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। এর মাধ্যমে উন্নয়নও টেকসই হবে না। পরিবেশের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার  বলেন, ‘আমার কাছে জানতে চাইছেন কেন, মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করুন।’

পরে মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের পরিবেশদূষণ এতটাই দৃশ্যমান যে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা না বললেও আমরা বুঝতে পারি। দেশে পরিবেশ সুরক্ষা অবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত, যাতে পরিবেশের কোথায় উন্নতি করতে হবে, তা বোঝা যায়। শুধু আইন করলেই হবে না, পরিবেশ সুরক্ষায় সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

ইপিআইয়ের ২০১৮ সালের তালিকায় বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৯তম ছিল। ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০ ধাপ পিছিয়ে যায়। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়ে ১৬২তম অবস্থানে উঠে আসে। ওই বছর ১৭৭ নম্বরে ছিল সিয়েরা লিওন।

এর আগে ২০২১ ও ২০২২ সালে বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা একিউআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বায়ুর মান বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ। আর রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে সবার নিচে দিল্লির পরে ঢাকার অবস্থান। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বসবাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে তৈরি প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্বের প্রধান প্রধান শহরের মধ্যে নিচের দিকে ছিল। ২০২১ সালে ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকা ছিল ১৩৭তম। তালিকায় ঢাকার নিচে ছিল পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরেসবি, নাইজেরিয়ার লাগোস ও সিরিয়ার দামেস্ক।

ইপিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের পরও দেশগুলো প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নে সক্রিয় নয়। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশগুলো যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার মধ্যে ডেনমার্ক ও যুক্তরাজ্য তা পূরণের পথে রয়েছে। ভারত, চীন ও রাশিয়া কার্বন নিঃসরণ বাড়াচ্ছে।

পরিবেশ সুরক্ষার ৪০টি বিষয়কে মানদণ্ড ঠিক করে ইপিআই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বায়ুর মান, জ্বালানি ও জলবায়ু, বায়ু দূষণ, পানিসম্পদ, ভারী ধাতু বা হেভি মেটাল, জীববৈচিত্র্য ও তাদের বসতি এলাকা, বনভূমি, মৎস্যসম্পদ ও কৃষি খাত। এর মধ্যে কৃষি ও মৎস্যসম্পদে বাংলাদেশের অবস্থা বেশ ভালো। বাকিগুলোতে অবস্থা নিচের সারিতে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান  বলেন, সরকার দেশে শুধু বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণকে গুরুত্ব দেয়। পরিবেশ সুরক্ষায় যে উন্নয়ন হতে পারে, তা নীতিনির্ধারকদের মাথায় নেই। ফলে একের পর এক বন, জলাভূমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়নের নামে শুধু কিছু অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। এখনো সময় আছে, সরকারের উচিত পরিবেশ ধ্বংস না করে সুরক্ষার উদ্যোগ নেওয়া।

পরিবেশ সুরক্ষায় বিভিন্ন মানদণ্ডে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ২৩ দশমিক ১ নম্বর পেয়েছে। ১৮ দশমিক ৯ নম্বর পেয়ে সবচেয়ে নিচে রয়েছে ভারত। আর সবচেয়ে বেশি প্রায় ৮০ নম্বর পেয়ে শীর্ষে ডেনমার্ক