বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেদারল্যান্ডসের দি হেগস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস গত ২৩ জুন ২০১৯ তারিখে রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপন করেছে।
এ উদযাপনে দূতাবাস মিলনায়তন স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশী, ছাত্র/ছাত্রী, গণ্যমান্য ডাচ নাগরিকরা এবং দূতাবাস পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। ‘মানবিকতা সর্বত্র’ এ আহ্বান ধারণ করে শিশুদের পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ধারাবাহিক আলোচনা এবং সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের এই দুই মহীরুহের শিক্ষা/আদর্শ তুলে ধরা হয়।
নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মান্যবর শেখ মুহম্মদ বেলাল তার বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের লেখনীতে মানবিকতার যে জয়গান ফুটে উঠেছে তার প্রতি আলোকপাত করেন। নজরুলকে স্বর্গীয় উপহার হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বেলাল সাম্যবাদ এবং দমনমুক্ত সমাজ গঠনে তার শিক্ষা কতটা প্রয়োজনীয় ছিল তা শ্রোতামন্ডলীর সামনে তুলে ধরেন। এ প্রেক্ষিতে কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা এবং বাংলাদেশকে তার চিরনিদ্রার স্থান হিসেবে গ্রহণের সুযোগ করে দেবার জন্য রাষ্ট্রদূত বেলাল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদৃষ্টি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। রবীন্দ্রনাথের উপর আলোচনায় রাষ্ট্রদূত বেলাল তার ইউরোপ এবং পশ্চিমা বিশ্বে অবস্থানকালীন সময়ের প্রতি আলোকপাত পূর্বক সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে পশ্চিমাদের মানবতার স্বার্থে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী মানসিকতা বেরিয়ে আসার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন সে বিষয় উপস্থিতিদের সামনে তুলে ধরেন। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট-এর প্রতি আলোকপাত করে রাষ্ট্রদূত বেলাল যেকোন পরিস্থিতিতে মানুষের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে শান্তিময় পৃথিবী গঠনে রবীন্দ্রনাথ যে শান্তির বাণী প্রচার করেছিলেন তা বর্ণনা করেন। রাষ্ট্রদূত বেলাল উপস্থিতিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন যে স্থানাভাবে তাদের জন্য এ আয়োজন আরও বড় পরিসরে করা সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের আলোকে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও সুচারুভাবে আয়োজনে দূতাবাস সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে জনাব শাকিল এবং মিজ জুই তাদের আলোচনাপত্রে রবীন্দ্র-নজরুলের শিক্ষা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। তারা রবীন্দ্র-নজরুলের লেখনী এবং জীবন থেকে নানাবিধ শিক্ষনীয় বিষয় তুলে ধরেন এবং মন্তব্য করেন যে তাদের এই শিক্ষা কেবল বাংলাদেশ অথবা দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠীর জন্যই প্রযোজ্য নয়, এ শিক্ষা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য। চিত্তব্রত সাহা অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অংশ পরিচালনার পাশাপাশি আলোচনা পর্বও সঞ্চালনা করেন। রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি কিভাবে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে এসেছেন তার প্রতি তিনি আলোকপাত করেন।
সংগীত পরিবেশনা পর্বে মিজ প্রজ্ঞা ভট্টাচার্জ, যিনি নেদারল্যান্ডসে সংগীত শিক্ষামূলক স্কুল সংগীতি’র প্রতিষ্ঠাতা, রবীন্দ্র সংগীত ও নজরুল গীতি একক পরিবেশনার মাধ্যমে উপস্থিতিদের মুগ্ধ করেন। সংগীত পরিবেশনায় আরও অংশগ্রহণ করেন মিজ অপর্ণা সাহা, মিজ শম্পা এবং মিজ ইশিতা মিত্র সাহা। রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের সহধর্মিণী ড. দিলরুবা নাসরিন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন পূর্বক সংগীত পরিবেশন করেন এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের অব্যবহিত পরেই কোন অনুষ্ঠান বিধায় এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় বাংলাদেশী কম্যুনিটির সদস্যরা পুনর্মিলনীর আমেজে অংশগ্রহণ করেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণী অনুষ্ঠানে পাঠ করে শোনানো হয়।
অংশগ্রহণকারীদের পুরস্কার প্রদান শেষে রাষ্ট্রদূত বেলাল শিশুদের এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে কেক কাটেন।
পরিশেষে সকল অতিথিদের নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয় এবং পায়েস ও সেমাই পরিবেশিত হয়।