ঢাকাঃ নূন্যতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রকল্যাণ পরিচালক পদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জি. এম. আল-আমীনকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদেরকে অবহেলিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।
জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ৬৮০ জন শিক্ষক রয়েছেন। এদের মধ্যে শুধুমাত্র অধ্যাপক হিসেবে রয়েছেন ১৫৬ জন শিক্ষক। তন্মধ্যে গ্রেড ১ এর ৩৬ জন, গ্রেড ২ এর ৪৬ জন ও গ্রেড ৩ এ রয়েছেন ৭৪ জন।
এছাড়াও সহযোগী অধ্যাপক ১৭৭ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৯০ জন ও প্রভাষক ৬৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৬ জন অধ্যাপককে রেখে উপাচার্যের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ড. জি. এম. আল-আমীনকে দায়িত্ব দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতারা।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধির ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, পরিচালক ছাত্রকল্যাণ ভাইস-চ্যান্সেলরের সুপারিশক্রমে, শিক্ষা প্রশাসনে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ন্যূনতম সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদা সম্পন্ন শিক্ষকদের মধ্য থেকে সিন্ডিকেট কর্তৃক দুই বছরের জন্য পরিচালক ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নিযুক্ত হবেন। পরিচালক ছাত্রকল্যাণ ভাইস-চ্যান্সেলরের নিয়ন্ত্রণে থেকে ছাত্রদের শৃঙ্খলা এবং শিক্ষাবহির্ভূত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও তত্ত্ববধান এবং সার্বিক কল্যাণ বিধান করবেন। পরিচালক ছাত্র কল্যাণের অন্যান্য দায়িত্ব ও ক্ষমতা সিন্ডিকেট কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ পদে সহযোগী অধ্যাপককে নিযুক্ত করা প্রশাসনের খামখেয়ালি ছাড়া কিছুই নয়। অনতিবিলম্বে এ আদেশ স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ১৫৬ জন অধ্যাপকদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক পদে নিযুক্ত করার দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপককে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য এবং দুইজনকে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং তারা সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও প্রাইভেট বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, অথচ প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
এর আগে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলামকে দ্বিতীয় মেয়াদে ছাত্রকল্যাণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করলে তার নিয়োগটি বাতিল করা হয়। অন্য অধ্যাপকদের সুযোগ দিতেই অপারগতা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছিলেন অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম। এরপর থেকে প্রায় দেড় মাস ছাত্রকল্যাণ পরিচালক পদ খালি ছিল।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. শওকত জাহাঙ্গীর বলেন, ধারা অনুযায়ী এ পদে নিয়োগ পেতে নূন্যতম সহযোগী অধ্যাপক হওয়া আবশ্যক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা উপাচার্যের পরামর্শে এই নিয়োগ দিবে অথবা জরুরী পরিস্থিতিতে উপাচার্য নিজেই এই নিয়োগ দিতে পারেন। তবে ২৯ তারিখ সিন্ডিকেট, সেখানে মাত্র ২-৩ দিন আগে তাড়াহুড়ো করে এই নিয়োগ দেয়া মোটেও সমীচীন নয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. লুতফর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৬ জন অধ্যাপক থাকা স্বত্বেও একজন সহযোগী অধ্যাপককে নিয়োগ দেয়া বাঞ্ছনীয় হয়েছে। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ যেখানে পূর্বে গ্রেড-১ এর একজন অধ্যাপক এ দায়িত্ব পালন করে এসেছেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়