নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোড়ঃ নিয়োগ বাণিজ্যের কোপানলে পড়ে কেশবপুরের মহাদেবপুর রেজাকাটী বগা সেনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা চার মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। নবনিযুক্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ৭টি শুন্য পদে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বেতন বিলে স্বাক্ষর করবেন না।
সভাপতির সাথে কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে মতবিরোধে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। চার মাস ধরে বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা। বেতনের দাবিততে শিক্ষক কর্মচারী ও কমিটির অন্যান্যা সদস্যগন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট পৃথক পৃথক আবেদন নিবেদন করেও কোন ফল পাননি।
সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, মহাদেবপুর রেজাকাটী বগা সেনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৭টি শুন্য পদ রয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে গত ১২-০৯-২২ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন। সভাপতি নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ৭টি শুন্য পদে নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করেন।
সে মোতাবেক গত ৬-১১-২২ তারিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবেদন জমা পড়েছে প্রধান শিক্ষক পদে চার জন সহ মোট ২৭ জন প্রার্থীর। এই নিয়োগ নিয়ে কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে সভাপতির মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
কমিটির সদস্য আবুল কাসেম জানান, সভাপতি চান তার মন মতো লোকের নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু আমরা বলেছি, নিয়োগের ব্যাপারে আমাদের কারো টাকার দাবি নেই তবে বিদ্যালয়ে এলাকার লোকজনদের নিয়োগ দিতে হবে। তাতে তিনি রাজি না হয়ে বেতন বিলে স্বাক্ষর করা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা কমিটির সকলে তাকে বার বার অনুরোধ করেছি বেতন বিলে স্বাক্ষর করতে কিন্তু তিনি করেননি।
এরপর ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যরা মিলে গত ১৮-০১-২৩ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি তাতেও কোন ফল হয়নি। ফলে শিক্ষক কর্মচারীরা গত চার মাস ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অথচ নিয়োগের সাথে শিক্ষক কর্মচারীর বেতনের কোন সম্পর্কই নেই। তিনি অভিযোগ করেন, সভাপতি মোটা অংকের টাকা নিয়ে তার লোকদের নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, এস এম রুহুল আমীন সভাপতি নিযুক্ত হবার পর তাদের এক মাসের বেতন বিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। তারপর থেকে বিলের কাগজ নিয়ে গেলে তিনি আর স্বাক্ষর করেননি। প্রতি মাসে বিলের কাগজ নিয়ে তার কাছে গেলে তিনি বলেন, নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বেতন বিলে স্বাক্ষর করবেন না।
সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রয়ারি বেতন বিলের কাগজ নিয়ে গেলে তিনি একই কথা বলেন। এরপর গত সোমবার বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক কর্মচারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট কোন কারণ ছাড়া বদ্ধ রাখা তাদের বেতন পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন।
বিদ্যালয়ের দপ্তরি আবুল হোসেন জানান, চার মাস বেতন না পেয়ে আমার সংসার চলছে না। আমার মাত্র ৮ কাটা জমি রয়েছে। বেতনের টাকা দিয়ে আমার সংসার চালানোর একমাত্র ভরসা।
শিক্ষক প্রশান্ত সরকার জানান, তার ছেলে বুয়েটে লেখাপড়া করে। চার মাস বেতন না পাওয়ায় ছেলের লেখাপড়ার টাকা দিতে পারছি না।
শিক্ষক এস এম আবুল হোসেন, সঞ্জীব কুমার যাজ্ঞীকসহ সকললেই জানান, তারা খুব কষ্টে দিন পার করছেন। কবে নিয়োগ হবে আর কবে তাদের বেতন হবে তা অনিশ্চত।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন জানান, কমিটির অন্যরা তাদের পরিবারের লোকজন নিয়োগ দিতে চায়। আমি তাতে রাজি না। এছাড়া বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির নবায়ন ছিলো না পরে সেটা করে এনেছে। তারা আমার সাথে যোগাযোগ করে না। নিয়োগে অর্থ বানিজ্যের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি কখনো অর্থ হাতে নেয়না সেটা সবাই জানে। তারা যদি কারো কাছে টাকা দেয় তার জন্য আমি দায়ি না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রশিদ জানান, নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়েছি। বিদ্যালয়ের কমিটির সদস্য ও সভাপতির বিরোধের কারণে শিক্ষক কর্মচারীরা চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে গিয়ে কমিটির সদস্যদের এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে আলোচনা করবো।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরিফুজ্জামান জানান, নির্বাহী কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় তিনি অতিরিক্তি দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়