সাতসতেরো :
কেউ বলেন ঝরাপালকের কবি, কেউ বলেন রূপসী বাংলার কবি, কেউ বলেন বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি, কেউ বলেন তিমির হননের কবি, সবকিছু ছাপিয়ে এটাও বলা যায় যে- তিনি নির্জনতার কবি, তিনি জীবনানন্দ দাশ। কবির ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ।
১৯৯৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। মা কবি কুসুম কুমারী দাশ ও বাবা সত্যানন্দ দাশ। পড়াশোনা ম্যাট্রিক ও আই এ বরিশালে। অনার্সসহ বি এ ও এম এ কলকাতায়।
স্কুলজীবনেই কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা ও ইংরেজিতে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে।
উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে : ‘মাল্যবান’ (১৯৭৩), ‘সুতীর্থ’ (১৯৭৭), ‘জলপাইহাটি’ (১৯৮৫), ‘জীবনপ্রণালী’, ‘বাসমতীর উপ্যাখ্যান’ ইত্যাদি।
তার গল্পের সংখ্যাও প্রায় দুই শতাধিক। ‘কবিতার কথা’ (১৯৫৫) নামে একটি মননশীল ও নন্দনভাবনামূলক প্রবন্ধগ্রন্থও আছে তার।
বাংলার প্রকৃতির রূপের শল্যবিদ, তিনি বাংলার প্রকৃতির অধরা রূপ তিনি নিপুণভাবে তার কবিতায় তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দের কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ আখ্যা দিয়েছিলেন। জীবনানন্দ তার কবিতায় প্রকৃতির যে বর্ণনা করে গেছেন তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তার ভাষার গভীরতা, অনুভূতির গভীরতা আজও কবি এবং পাঠকদের মোহিত করে।
চারপাশের খুব সাধারণ দৃশ্যপটও তার লেখায় ছিল অসাধারণ। তিনি লিখেছেন-
‘হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে/তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে-উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!/তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে!/পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;/আবার তাহারে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে/বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!/হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে/তুমি আর উড়ে-উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!’
কবি ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.