নিয়মবহির্ভূতভাবে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ায় রাজশাহী কলেজে ভাঙচুর

রাজশাহীঃ রাজশাহী কলেজে নিয়মবহির্ভূতভাবে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ায় গণিত বিভাগের শিক্ষককে হুমকি, গালিগালাজ ও ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুরের ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার সময় দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বেলা ৩ টার দিকে রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

আহত দুই সাংবাদিককে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। আহত দুজন হলেন- রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ জার্নালের জেলা প্রতিনিধি আবু সাইদ রনি এবং রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ও রাজশাহী পোস্টের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল আলীম। রনিকে হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আর আলীমকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফরের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা শিক্ষকদের সঙ্গে অকৃতকার্য পরিক্ষার্থীদের কেন পরিক্ষা দিতে দেয়া হবে না? এই নিয়ে তর্কবিতর্ক করছিলো।

সেখানে দায়িত্বরত শিক্ষককে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা মারমুখী হলে বিষয়টি জানার পর সেখানে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল খালেকসহ শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে যান। এসময় সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত শিক্ষকদের উপর চড়াও হলে দুই সাংবাদিক ঘটনার ভিডিও ধারণের জন্য ফোন বের করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুই সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় বাঁধা দিতে আসলে কলেজ অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকদেরও লাঞ্চিত করা হয়। এসময় গণিত বিভাগে ভাংচুর এবং আহত দুই সাংবাদিকদের ফোনসহ মানিব্যাগও ছিনতাই করে নিয়ে যায় তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফরের নেতৃত্বে তার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী সাঈদ হাসান আশিক, মো. সাহেদুজ্জামান, আশিকুর রহমান সজিব, সাজেদুর রহমান সিজার, মো. মেহেদী, আবদুর রহিম, মো. জাকারিয়া ও সাব্বির হোসেন এ হামলা চালিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

এদিকে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম জানান, তাদের সহকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান। আর হামলাকারীরা যেহেতু কলেজেরই শিক্ষার্থী, তাদের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপস্থিত একাধিক শিক্ষক জানান, রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের ভয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবসময় তটস্থ থাকে। প্রায়শই তারা ডিপার্টমেন্টে ডিপার্টমেন্ট গিয়ে শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার পরিণত খুবই ভয়াবহ হয়। এজন্য শিক্ষকরা ভয়ে কিছু বলতে পারে না। এসময় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধেরও দাবি জানান শিক্ষকরা।

এই বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল খালেক জানান, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে কোনো বিভাগেই ইনকোর্স পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ নিয়ম নেই। এ জন্য গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ রানাকেও বিভাগে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় ছত্রলীগের কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার সামনেই শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও ভাংচুর করছিল। এসময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা দুই সাংবাদিককে মারপিট করেন। পরে আহত দুই সাংবাদিককে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

অধ্যক্ষ আরও জানান, হামলাকারীরা সাংবাদিকদের তিনটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে তারা ফেরত দিয়েছে। এ সময় একটি মোবাইল ফোন ভাঙা পাওয়া গেছে। আছড়ে ফোনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তির ব্যাপারে সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়