সুখে থাকতে আত্মবিশ্বাস, আত্মপ্রেম ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

আত্মবিশ্বাস তৈরিতে আত্মপ্রেম এবং নিজেকে ভালোবাসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাস কম থাকলে কোনো কাজে এগিয়ে যাওয়া এবং নিজেকে অনুভব করা কঠিন হয়ে পড়ে। আত্মপ্রেম আসলে কী তা বোঝাটা কখনও কখনও চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। নিজেকে কীভাবে ভালোবাসবেন তা জানাতেই আজকের প্রতিবেদন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ভেরিওয়েল মাইন্ড’-এর প্রতিবেদনে ভালো থাকার কিছু কৌশল জানানো হয়েছে।
অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেন না: তুলনা হলো আত্মপ্রেমের অন্যতম বড় শত্রু। যখন আমরা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি, তখন বিশ্বাস করতে শুরু করি আমরা যথেষ্ট ভালো নেই। এটা ঠিক নয়। এর পরিবর্তে, নিজের ওপর ফোকাস করুন। অন্যের অর্জন নিয়ে না ভেবে নিজের সাফল্য উদযাপন করুন।

মনে রাখবেন, প্রত্যেকের নিজস্ব গল্প এবং জীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই অন্যরা যা করছে তার ওপর খুব বেশি জোর দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।

সীমানা নির্ধারণ করুন: সম্পর্কের সীমারেখা অন্যদের প্রতি সম্মান দেখানোর সময় আবেগ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণে থাকতে সাহায্য করে।

যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বা ব্যক্তির জন্য অস্বস্তি বোধ করেন, তাহলে কোন আচরণ গ্রহণযোগ্য এবং কোনটি নয় তা তাদের জানাতে দৃঢ় থাকুন। সম্পর্কের সীমানা নির্ধারণ আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।

অন্যরা আপনাকে সুখী করবে এমন প্রত্যাশা করবেন না: এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনাকে খুশি করার জন্য অন্য কারও প্রয়োজন নেই। আপনি যখন নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসতে শিখবেন এবং ভেতরে তৃপ্তি পাবেন, তখন আর কারও ওপর নির্ভর করবেন না।

যেকোনো সম্পর্ক একতরফা নয় বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং নিঃশর্ত ভালোবাসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

অন্যদের মতামতের ওপর আপনার মূল্য নির্ধারণ করবেন না: এটা মনে রাখবেন, আপনার সম্পর্কে অন্যদের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না। প্রত্যেকেরই আলাদা মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তাই তারা যা বলে তা খুব ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়ার চেষ্টা করুন।

দিনের শেষে, শুধু আপনিই নিজেকে ভালো জানেন। আপনি কীভাবে জীবনযাপন করতে চান সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনার আছে।

নিজের শক্তি শনাক্ত করুন: আত্মবিশ্বাস কম থাকলে ‍নিজের সম্পর্কে ভালো ব্যাপারগুলোও ছোট করা সহজ হয়। নিজের ভালো বিষয়গুলো উপেক্ষা করে এভাবে শুধু দুর্বলতাগুলো ফোকাস করা ঠিক নয়। বরং নিজের দক্ষতা, প্রতিভার দিকে নজর দিন। আপনি যা অর্জন করেছেন তার ওপর ফোকাস করুন। নিজের সাফল্য উদযাপন করতে শিখুন। নিজের কৃতিত্বের প্রশংসা করতে লজ্জা পাবেন না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আপনাকে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অনুপ্রাণিত করবে।

নিজের সঙ্গে ইতিবাচক কথা বলা অনুশীলন করুন: আপনি যেভাবে নিজের সঙ্গে কথা বলেন তা আপনার আত্মবিশ্বাসের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। অতএব, নিজের সঙ্গে ইতিবাচক কথা বলা অপরিহার্য।

প্রতিদিন সকালে, দিন শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে, আপনার সম্পর্কে ভালো বিষয়গুলো নিজের সঙ্গে আলাপ করুন। নিজেকে মনে করিয়ে দিন আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে বলতে পারেন, আজ, যে কাজই হোক না কেন আমি করতে পারব। কারণ আমি দক্ষ এবং যোগ্য।

নিজেকে ক্ষমা করুন: মনে রাখবেন, ভুল জীবনেরই একটা অংশ। প্রত্যেকেরই ভুল হতে পারে। অতীতের ব্যর্থতার জন্য নিজেকে বারবারে দোষারোপ করবেন না। বরং, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী শিখছেন এবং কীভাবে এই অভিজ্ঞতা আপনাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো থাকতে সাহায্য করতে পারে তার ওপর ফোকাস করুন। অপরাধবোধ বা লজ্জা অনুভব না করে আত্ম-সহানুভূতি, বোঝাপড়া এবং ভালোবাসার জন্য জায়গা তৈরি করুন।

নিজের দোষ মেনে নিন: কেউই নিখুঁত নয়, এটা আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। সব দোষ মুছে ফেলা যায় না। কারণ দোষ-গুণ মিলিয়েই মানুষ। আপনি যদি নিজের দোষ মেনে না নেন, তাহলে তা আপনার আত্মবিশ্বাসকে প্রভাবিত করতে পারে।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন: কৃতজ্ঞতা এমন এক শক্তিশালী অভ্যাস যা আপনার দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করবে। আপনার জীবনে কিছু ভালো ঘটেছে তা লিখে বা প্রার্থনার মাধ্যমে স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন। সেটা হতে পারে আপনার স্বাস্থ্য, আপনার সম্পর্ক, কোনো অর্জন বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপেভোগ। অনেক সময় নিজে অনুশীলন করার পরও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থেকেই যায়। সেক্ষেত্রে অন্যের সাহায্য নিতে ভয় পাবেন না। বিশ্বস্ত কোনো বন্ধু, পরিবারের সদস্য কিংবা একজন থেরাপিস্টের সহায়তা নিতে পারেন।