সুভাষ বিশ্বাস, নীলফামারী প্রতিবেদকঃ জেলার সদর উপজেলায় নিখোঁজের এক দিন পর সেচ নালা থেকে এক শিশুর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ঐ শিশুর নাম শাহরিয়ার শিহাব (১২)।
রবিবার (৫ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের বাড়ির অদূরে একটি সেচ নালা থেকে শিহাবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে ওই গ্রামের এরশাদুল হকের ছেলে এবং মমতাজ মেমোরিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
স্বজনরা জানায়, গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিখোঁজ হয় শিহাব। এর পর সারা রাত আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে তাকে খুঁজতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। এমনকি এলাকায় তার সন্ধানে মাইকিং করা হয়। তাকে না পেয়ে রবিবার সন্ধ্যায় সদর থানায় ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
এরপর রাত ৯টার দিকে (রবিবার) জমিতে সেচ দিতে গিয়ে বাড়ির প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সেচ নালায় তার লাশ দেখতে পান এক কৃষক। পরে তার চিৎকারে এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও সিআইডি ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
শিহাবের দাদা মতিয়ার রহমান (৬০) বলেন, ‘কাইল মাগরিবের নামাজ পড়ি মুই মোড়ের (বাড়ির এলাকার মোড়) দোকানত দেখেছ শিহাব পুড়ি খাছে। এর পর দাদা-নাতি একসঙ্গে পুড়ি খায়া বাড়ি আইসেছি। বাড়ির কাছোত আসিয়া কইল তোমরা বাড়ি যাও মুই পরে আইসেছ। সেই থাকি কোনঠে গেইল আর সারা রাইত খুঁজি পাইনো না।’
দাদি এলেজা বেগম (৫৫) বলেন, ‘দোলাত হামার আবাদের জন্য মোটর (সেচ পাম্প) আছে। প্রত্যেক দিন সন্ধ্যাত নাতিটা (শিহাব) মোটরের ঘরোত কারেন্টের বাতিটা জ্বলে দিয়া আইসে। কাইল সইন্ধ্যাত মোক কয়া বাতিটা জ্বলে দিবার গেইল। এরপর আর ফিরি আসিলেক না। সারা রাইত, আজি সারা দিন খুঁজিনো, কোনঠে পাইনো না। রাইতোত চিল্লাচিল্লি শুনিয়া যায়া দেখেছি মোর নাতি আর বাঁচি নাই।’
স্থানীয়রা জানায়, বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সেচনালায় গর্ত করে গলা কাটা অবস্থায় শিহাবকে পুতে রাখা হয়। রবিবার রাত ৯টার দিকে প্রতিবেশী এক কৃষক জমিতে সেচ দিতে গেলে ওই নালার মাঝখানে মাটি উঁচু হয়ে থাকার কারণে পানি আটকা পড়ে। এ অবস্থায় ওই মাটি সরাতে গেলে শিহাবের গলা কাটা লাশ দেখতে পায়। পরে তার চিৎকারে এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে শিহাবের লাশ শনাক্ত করে।
নিহত শিহাবের বাবা এরশাদুল হক শহরের একটি দোকানের কর্মচারী। মা শাহানাজ বেগম ইপিজেডের একটি কারখানার শ্রমিক। তারা দুই ভাই-বোনের শিহাব বড়। তার ছোট বোন ইসরার বয়স তিন বছর। শনিবার তার বাবা-মা কর্মস্থল থেকে ফেরার আগে নিখোঁজ হয় সে।
এ বিষয়ে নীলফামারী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যা রহস্য উদঘাটনে পুলিশের সঙ্গে ডিবি পুলিশ ও সিআইডি কাজ করছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়