নারায়ণগঞ্জে যৌন হয়রানির অভিযোগে দুই শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

 মোঃ জিয়াউর রহমান, জেলা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ।।

নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রীকে যৌন হয়রানী এবং বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করা শিক্ষার্থীদের মারধর করার অভিযোগে দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত ও স্কুলের বর্তমান পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। বুধবার ২৪ জুলাই সকালে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে অভিযোগর সত্যতা পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ওই নির্দেশনা দেন। ওই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম এ রশিদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পিন্টু বেপারী, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ.ক.ম নুরুল আমিন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, স্কুল পরিচালনা কমিটির গোলাপ হোসেন, ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন সহ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সকলের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং মারধরের শিকার শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এমপি সেলিম ওসমান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এমন নির্দেশ প্রদান করেন। শিক্ষকদের মধ্যে ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগে শিক্ষক আল-আমিন এবং শিক্ষার্থীদের মারধরে অভিযোগে শিক্ষক কাউসারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জানা গেছে, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ইংরেজী শিক্ষক আল আমিন ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানী করে। কয়েকজন ছাত্রী এ ঘটনা দেখে প্রধান শিক্ষকের কাছে নালিশ করে। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটিকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ২২ জুলাই ক্লাস বর্জন করে স্কুল মাঠে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। পরদিন ২৩ জুলাই মঙ্গলবার স্কুলে এসে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে চাইলে বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক কাউসার ও গণিত বিষয়ের শিক্ষক রতন চন্দ্র সূত্রধর বেত ও লাঠি নিয়ে শিক্ষার্থীদের এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকেন। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।

বুধবার সাকলে সেলিম ওসমান সহ অন্যরা স্কুলে উপস্থিত হলে যেসব শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে তারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখান। তখন অভিযুক্ত শিক্ষক নিজেও মারধরে কথাটি স্বীকার করেছে। ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে জোর পূর্বক সরিয়ে দেন শিক্ষক আলআমিন। তাকে সাক্ষ্য না নেওয়ার জন্য সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সে মোবাইল ফোনে তার বক্তব্য রেকর্ড করে প্রদান করেন। অপরদিকে ছাত্রীকে এসএমএস মাধ্যমে প্রলোভন এবং কু প্রস্তাব দেওয়া বিষয়টি শিক্ষক আলআমিন নিজেও স্বীকার করেছে। এদিকে এমপি সেলিম ওসমান দু:খ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমাদের মায়ের নামে স্কুলটির অবকাঠামো এবং শিক্ষাগত মান আরো আধুনিক ও উন্নত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এম এ রশিদ, আবুল জাহের, সালাম চেয়ারম্যান, ইউএনও, শিক্ষা অফিসার বন্দর থানার ওসিকে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সমাধান করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ সেলিম ওসমান আগামী শনিবার থেকে স্কুলটি নতুন ভাবে পরিচালিত হবে বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।