নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন আগামী সপ্তাহে অর্থাৎ ১০ নভেম্বর ভারতে আসছেন। ভারতে অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রী পর্যায়ের টু প্লাস টু সংলাপে যোগ দিতে তারা নয়াদিল্লিতে সফর করবেন। এই সফরে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক এবং বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। ১০ নভেম্বর ব্লিঙ্কেনের ভারত সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, এই নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন চোখে দেখবে এবং নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়ে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ আরোপ করবে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা হতে পারে নয়াদিল্লিতে। ব্লিঙ্কেন এবং জয়শঙ্করের বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যখন বাংলাদেশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আর এই কারণেই এই সফরের দিকে দৃষ্টি থাকবে কূটনৈতিক মহলের।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কি করবে না এ নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন রয়েছে। বিএনপি এখনকার অবস্থান হল যে তারা কোনোভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। এ উপলক্ষে তারা টানা অবরোধ ডাকছে। এখন দুই দিনের বিরতি দিয়ে আবার দুই দিনের অবরোধ দেওয়া হয়েছে রোববার ও সোমবারে। এরকম পরিস্থিতিতে একটি নির্বাচন কি অর্থপূর্ণ হবে? সেই নির্বাচনে কি জনমতের প্রতিফলন ঘটবে ইত্যাদি প্রশ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ইস্যুতে অভিন্ন হয়ে কাজ করছে। তবে সাম্প্রতিক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের থেকে আলাদা অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের ব্যাপারে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন চাপ দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। যদিও গত কিছুদিনে এ পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ওয়াশিংটনে নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠক এবং ২৭ অক্টোবর ওয়াশিংটনে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বৈঠকের পর পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর চেয়েও বড় কথা হল ২৮ অক্টোবর বিএনপির আত্মঘাতী রাজনৈতিক তৎপরতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হতবাক করে দিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলছিল যে রাজধানীতে সহিংসতা কোনো জায়গা নাই। সহিংসতার পথ পরিহার করতে হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে মত প্রকাশ করবে। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে বিএনপি যেভাবে জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি করেছে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিসেবের বাইরে। যদিও এরপর মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে শর্তহীন সংলাপের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরকম একটি বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি ভূমিকা নিবে? তারা কি ভারতের সঙ্গে অভিন্ন মত পোষণ করবে?
ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক আগে থেকে সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করে আসছে। ভারত সবসময় মনে করে যে বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করল না করল সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হল জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করল কিনা। একটি নির্বাচনে যদি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাহলে সেই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ভারত এটাও মনে করে যে গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা দরকার এবং ধারাবাহিকতা দরকার। আওয়ামী লীগের বিপরীতে এমন কোন দল যদি ক্ষমতায় আসে যারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ লালন করে তাহলে ভারত সেটা বরদাস্ত করবে না এমন বার্তাও ভারতের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। আর এই নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দু’দফা বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের ইস্যুতে জয়শঙ্করও একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে নির্বাচনের আগে এবং বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১০ নভেম্বরের ব্লিঙ্কেন-জয়শঙ্করের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি চূড়ান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়