নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শঙ্কা: অর্ধলাখ শিক্ষকের পদ শূন্য

ঢাকাঃ বেসরকারি পর্যায়ের ৩৫ হাজারের বেশি স্কুল কলেজ ও মাদরাসায় অর্ধ লাখেরও বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য। আর শূন্য পদের এসব শিক্ষক বেশির ভাগই বিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ের। একই সাথে ভৌতবিজ্ঞান, আইসিটি, জীববিজ্ঞান, চারুকলা বিষয়ের শিক্ষক পদও এ মুহূর্তে বেশি খালি। যদিও আর মাত্র এক মাস পরই শুরু হচ্ছে নতুন আরো দুই শ্রেণীতে পরিবর্তিত শিক্ষাক্রম।

এ অবস্থায় বিশাল সংখ্যার শিক্ষকের পদ খালি রেখে নতুন শ্রেণীর ক্লাস শুরু হলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন নিয়েও অশ্চিয়তা দেখা দেবে। এমনিতেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচার রয়েছে এর পরও যদি শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা তাদের শিখন কার্যক্রম ঠিকমতো চালাতে না পারে তাহলে শিক্ষা দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রে আরো বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। তখন হয়তো অভিভাবকদের মধ্যেও আরো বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি হবে।

অন্য দিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বলছে, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু আগে অর্থাৎ জানুয়ারির আগে নতুন শিক্ষক নিয়োগের উপায় নেই। আমাদের প্রস্তুতিও সেভাবে এখনো নেই। এর আগে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৩ সালের শুরুতে ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্য রেখেই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়।

এনটিআরসিএ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আরো জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। চতুর্থ ধাপে শিক্ষক যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ৬৮ হাজার পদ শূন্য। এমপিওপ্রাপ্য এসব এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। কিন্তু মাত্র সাড়ে ৩২ হাজার পদে প্রার্থী নির্বাচন করা যায়। যেখান থেকে মাত্র ২৭ হাজার নতুন শিক্ষককে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষাংশে চড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। যাদের কেউ যোগ দিচ্ছেন, কেউ দিচ্ছেন না। নতুন শিক্ষকরা সবাই যোগদান করলেও ৪১ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্যই থাকছে। এসবের সাথে যোগ হবে ২০২২ এর অক্টোবর থেকে ২০২৩ এর অক্টোবর পর্যন্ত গত এক বছরে অবসরজনিত কারণে শূন্য হওয়া শিক্ষক পদ। এ হিসাবে ৩৫ হাজার এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধ লক্ষাধিক পদ এখনো শূন্য। এনটিআরসিএর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে স্কুল ও মাদরাসায় ভৌতবিজ্ঞান, আইসিটি, জীববিজ্ঞান, চারুকলা বিষয়ের শিক্ষক পদ এ মুহূর্তে বেশি খালি। দাখিল মাদরাসায় সহকারী মৌলভীর পদ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ট্রেড ইনস্ট্রাক্টরের পদ বেশি খালি।

সূত্র আরো জানায়, মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধ লক্ষাধিক শিক্ষক পদ শূন্য। এমন পরিস্থিতিতেই অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। শিক্ষক সঙ্কট নিয়েই বাস্তবায়ন হওয়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাশাপাশি আগামী বছর অষ্টম ও নবমের ক্লাস নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নিতে হবে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার প্রধানরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের অনেকটা সময় সম্পৃক্ত থাকতে হচ্ছে। তাই শিক্ষক সঙ্কট নিয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন ২০২৩ সালে চালু হওয়া শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তা কোনোভাবে পার করা গেলেও আসছে বছর চারটি শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন আরো অধিকতর চ্যালেঞ্জের হবে।

এ দিকে এনটিআরসিএর পরীক্ষা শাখার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নতুন প্রার্থী নিবন্ধনে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভা চলছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষে বা আগামী বছর জানুয়ারির শুরুতে এ নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হতে পারে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়