নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রধান শিক্ষকরাই বাধা

শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের (প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম) প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হলেও এখনো অন্ধকারে আছেন প্রধান শিক্ষকরা। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে তাদের ধারণা না থাকায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য এক ধরনের বাধা হচ্ছেন তারা। তাই দ্রুত প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন অন্য শিক্ষকরা।

জানা গেছে, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর অনলাইনে নামকাওয়াস্তে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। শিক্ষকদের সরাসরি প্রশিক্ষণ শুরু হয় ৬ জানুয়ারি থেকে। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিনগুলোয় মোট ৫ দিন এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০-২৪ জানুয়ারি বাদ পড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

শিক্ষকরা বলছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যেসব শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাদের প্রশিক্ষণে হাতে-কলমে শিক্ষাদানের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলা হয়েছে। এরপর সেখান থেকে ফিরে এসে শিক্ষার্থীরা অর্জিত জ্ঞান শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করবে। তাদের খাতায় বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরবে, দেয়ালিকা করবে। পাঠাগারসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু নতুন কারিক্যুলামে এসব বিষয় থাকলেও তা বাস্তবায়ন অনেক চ্যালেঞ্জের। কারণ, এখনো প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকের ধারণা নেই। ফলে তারা বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেনই না। এ ছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা তো আছেই। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষাদানের কথা বলা হলেও অনেক প্র্যাকটিকাল উপাদানই গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানে নেই।

শিক্ষকরা আরও বলছেন, কারিকুলাম সরকারের সুদূরপ্রসারী চিন্তা। তবে তা বাস্তবায়ন করতে হলে অবাকাঠামোগত দিকটায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এর পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকদের দ্রুত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ বিষয়ে মিরসরাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে যেসব উপকরণ প্রয়োজন, একজন শ্রেণিশিক্ষকের পক্ষে তা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহ করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় উপকরণগুলো শ্রেণিকক্ষে সরবরাহ করা হচ্ছে না। হাতে-কলমে শেখানোর ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষকরা। কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক আন্তরিক হলেও অন্যগুলোতে তেমনটি নয়।

ফেনীর ছাগলনাইয়ার দেবপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, আমাদের কৃষিশিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঠে নিয়ে গেছেন। কারণ ক্লাসটা মাঠে নিয়ে গিয়েই করতে হবে, তেমনটাই আছে শিক্ষাক্রমে। এটা অধ্যক্ষের চোখে পড়েছে। তখন তিনি ক্লাস না করিয়ে কেন শিক্ষার্থীদের মাঠে নিয়ে যাওয়া হলো, সেটা নিয়ে কথা তুললেন। কিছু পাঠ শুরুই করতে হবে গল্প দিয়ে। এমন করার সময় অন্য শিক্ষকসহ প্রধান শিক্ষকরা ভাবছেন, আমরা না পড়িয়ে গল্প করছি। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এখনো প্রশিক্ষণ পাননি। তাদের যদি বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তাহলে হয়তো এসব বিষয়ে সমস্যা হবে না।

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার একজন মাস্টার ট্রেইনার বলেন, প্রশিক্ষণের আগে শিক্ষকদের মধ্যে শিক্ষাক্রম নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা ছিল। প্রশিক্ষণের পরে সেটা হয়তো কিছুটা কেটেছে। কিন্তু প্রশিক্ষণের বাইরে থাকায় প্রধান শিক্ষকরা এখনো নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, মাউশি পরিচালক (প্রশিক্ষণ) প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্যকে সাময়িকভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নতুন শিক্ষাক্রম ডিসেমিনেশন স্কিমের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে গত ২৪ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে নতুন পরিচালক করা হয়েছে তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলীকে। তবে এখনো তিনি কাজে যোগ দেননি। আগের পরিচালক প্রধান শিক্ষকের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে গেছেন। নতুন পরিচালক কাজ শুরু করলে ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করা যেতে পারে।

সম্প্রতি মাউশি পরিচালক (প্রশিক্ষণ) প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বলেছিলেন, প্রধান শিক্ষকদের আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। ৩২ হাজার প্রধান শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এদিকে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বেতন-ভাতা বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলছেন, সরকার নতুন শিক্ষাক্রম এনেছে, কিন্তু শিক্ষকদের জীবনমান অনেক নিচে। অনার্স-মাস্টার্স পাস করে শিক্ষকতায় ঢুকেও পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য অন্য চিন্তা করতে হচ্ছে। আর্থিক সংকট আছে। তাই শিক্ষকদের আর্থিক সংকট দূর করে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে উৎসাহী করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/০২/২৩