নতুন শিক্ষাক্রমে নম্বর বলেই কিছু থাকবে না

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শিক্ষাক্রম ইউনিটের সদস অধ্যাপক মশিউজ্জামান:বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা সব শিক্ষার্থীকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা দেবো। কেউ অবহেলিত থাকবে না, কেউ অতি আদর পেয়েও ঝরে পড়ার মতো দুর্ঘটনার মুখে পতিত হবে না। নিজ নিজ যোগ্যতায় আপন মনে বেড়ে উঠবে সবাই। রক্তকরবীর জায়গায় রক্তকরবী শোভা পাবে, গোলাপের জায়গায় গোলাপ সুবাস ছড়াবে। প্রত্যেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিবার, সমাজ ও দেশ গড়ায় সমান ভাগিদার হবে।

গতকাল একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন,  বর্তমান যে শিক্ষাক্রম, তাতে একজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাচ্ছে। বাহবা দেওয়া হচ্ছে। ১০ বছর পর খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, হয়তো সে হারিয়ে গেছে। অথচ জিপিএ-৪ বা তারও কম পাওয়া একজন শিক্ষার্থী খুব ভালো জায়গায় রয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অনেক মেয়েকে দেখবেন এখন গৃহস্থালি কাজ করছেন। আবার মধ্যম সারির কোনো স্কুল থেকে পাস করা মেয়েটি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বড় ব্যাংকে ভালো পদে চাকরি করছেন। নতুন শিক্ষাক্রমে এটা বলার কোনো সুযোগ নেই যে, তুমি ওর চেয়ে ভালো। ভালো ও খারাপ- এ বিশ্বাস ভেঙে দেওয়ার কাজটিই করছি আমরা। নম্বর বলেই কিছু থাকবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মুখে ফেলবো না, মূল্যায়ন করবো। মূল্যায়ন হবে যোগ্যতা ও আগ্রহ বা ঝোঁকনির্ভর। এ যোগ্যতা পরিমাপ করার নির্দিষ্ট কতকগুলো পারফরম্যান্স ইনডিকেটর থাকবে। সেটার সূচকও উল্লেখ করা থাকবে’

এসএসসির আগে নবম-দশম শ্রেণি। আগে একই সিলেবাসের ওপর এসএসসি পরীক্ষা হতো। এখন সেটা কেমন হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,  নবম ও দশম শ্রেণি এখন পুরোপুরি আলাদা। নবম শ্রেণিতে স্বাভাবিক মূল্যায়ন হবে। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হবে।

জিপিএ-নম্বর তুলে দিচ্ছেন। চিহ্নভিত্তিক মূল্যায়ন আনা হচ্ছে। বিষয়টি একেবারে নতুন। সেভাবে কেউ স্পষ্ট করতে পারছেন না। শিক্ষকরাও না! চিহ্নভিত্তিক মূল্যায়ন সমপর্কে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণি পর্যন্ত কারিকুলামে ষান্মাসিক ও বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন থাকবে। বর্তমানে আমরা ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে তিনটি চিহ্ন দিয়ে মূল্যায়ন করেছি। ত্রিভুজ, বৃত্ত ও চতুর্ভুজ। শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট বিষয়ে কোন পর্যায়ে আছে, তা বোঝানো হচ্ছে। এগুলো দিয়ে কিন্তু ভালো বা খারাপ বোঝানো হয়নি। কোনো একটি কাজ বা বিষয়ে তার ঝোঁক বা অবস্থান কোথায়, সেটা বোঝাতে চেয়েছি আমরা। আগে যেমন ফলাফলের রিপোর্টে আমরা লিখে দিতাম—তুমি বাংলায় ৭৫ বা ‘এ’ গ্রেড পেয়েছ, ইংরেজিতে ৬০ বা ‘এ মাইনাস’ গ্রেড পেয়েছ— এই গ্রেডিং ও নম্বরের প্রক্রিয়াটা একেবারেই থাকবে না।

ষষ্ঠ-সপ্তমে মূল্যায়ন নিয়ে অনেক সমালোচনা। ২০২৬ সালে এসএসসিতে একই প্রক্রিয়ায় ‍মূল্যায়ন হবে বলে শোনা যাচ্ছে। তখনও কি তিনটি স্তর অর্থাৎ ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ থাকবে কি’না প্রশ্নে তিনি বলেন,  না না, এটাতে আমরা পরিবর্তন আনবো। নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয় থাকবে। তার বিপরীতে পারফরম্যান্স ইনডিকেটর ইনডেক্স (পিআইআই) থাকবে। হয়তো সেখানে তিনটি, চারটি কিংবা পাঁচটি ইনডিকেটরও থাকতে পারে। সেগুলো মিলিয়ে সামারি (সংক্ষেপ) দাঁড় করানো হবে। সেটা হবে মূল মূল্যায়ন।

নম্বরের পরিবর্তে ইনডিকেটর বা চিহ্নে মূল্যায়ন… কেউ যদি ৫০-৬০ নম্বর পায়, সেটার জন্য একটি চিহ্ন থাকবে—বিষয়টি কী এমন? অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, নম্বর বলেই কিছু থাকবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মুখে ফেলবো না, মূল্যায়ন করবো। মূল্যায়ন হবে যোগ্যতা ও আগ্রহ বা ঝোঁকনির্ভর। এ যোগ্যতা পরিমাপ করার নির্দিষ্ট কতকগুলো পারফরম্যান্স ইনডিকেটর থাকবে। সেটার সূচকও উল্লেখ করা থাকবে।

চিহ্ন-সূচক দিয়ে ঠিক কি বোঝানো হচ্ছে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। খোদ শিক্ষকরাও জানেন না। অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের বোঝাতেও পারেন না। বিষয়টি নিয়ে গুজবও রটছে। এটি কীভাবে রুখবেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজের কথা বলছেন তো? এগুলো থাকবে না। আগামী পরীক্ষায় এগুলোও তুলে দেবো। সবাই মনে করছেন, ত্রিভুজটা তো মনে হয় সবচেয়ে উঁচু। তার মানে আমার সন্তান সবকটিতে ত্রিভুজ পেয়েছে, খুব উঁচুমানে রয়েছে। আনন্দে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন। এটা আমিও দেখেছি। এটা পরিবর্তন করবো। আগামী বছর যেটা সবচেয়ে খারাপ, সেটাকে ত্রিভুজ করে দেবো। যেটা সবচেয়ে ভালো, সেটিকে বৃত্ত করে দেবো। দেখি তখন তারা কী বলেন!

মূল্যায়নে শিক্ষকরা কতটা নিরপেক্ষ থাকবেন, তা নিয়ে সংশয়ে অভিভাবকরা। শিক্ষকদের কি কাউকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নতুন শিক্ষাক্রমে আছে প্রশ্নে তিনি বলেন, শিক্ষকরা মাত্র একবার মূল্যায়ন করেছেন। সেটা ষান্মাষিকে। সামনে নভেম্বরে তারা সামষ্টিক মূল্যায়ন করবেন। দ্বিতীয় দফায় মূল্যায়ন করলে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। এখানে পক্ষপাতিত্ব বা বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ ম্যানুয়ালি এটা থাকবে না। ২০২৪ সাল থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। শিক্ষকরা নির্দিষ্ট জায়গায় সূচকগুলো উল্লেখ করলেই তা অ্যাপস সংক্ষেপ করে দেবে। তাতে শিক্ষকদের কষ্ট ও সময় কমবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/১০/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়