ঢাকাঃ বই উৎসবের বাকি মাত্র দেড় মাস। প্রাথমিক স্তরের ৭৫ শতাংশ বই ছাপা হলেও সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিসহ মাধ্যমিকের ১০ কোটি বই ছাপার কাজ এখনো শুরুই হয়নি। পাশাপাশি বিএনপির ডাকা অবরোধের কারণে আটকে আছে প্রায় ২ কোটি পাঠ্যবই। এসব বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে আগামী বছরের শুরুর দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দেয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে প্রাথমিক, ইবতেদায়ি ও মাধ্যমিকের প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপানো হবে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্য ছাপানো হবে ১০ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বই। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং নবম শ্রেণির সব বই ছাড়া অন্যান্য বই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে।
তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম আশা করছেন, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে পারবেন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজও এ মাসে শেষ হয়ে যাবে। শুধু নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে এখন চুক্তি করা হচ্ছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নবম শ্রেণির বই উপজেলায় পাঠানো হবে। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও নতুন বই হাতে পাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এবার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া আগেভাগেই শুরু করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ এগিয়ে থাকলেও মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ পিছিয়ে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নবম শ্রেণি এবং কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষক গাইড বই ছাপাতে হবে ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার। এগুলো ছাপার বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে কিছুটা সময় লেগেছে। এ জন্য কিছুটা দেরি হয়েছে। কয়েকটি লটে (বই ছাপার কাজ হয় লটের ভিত্তিতে) ছাপার বিষয়ে চুক্তি করা হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে চুক্তি এখনো প্রক্রিয়াধীন। নিয়মানুযায়ী এই শ্রেণির বই ছাপার কাজ শেষ করতে ৫০ দিন সময় দিতে হবে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে দেড় মাস সময় আছে। অর্থাৎ ৫০ দিনের কম সময় আছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, এবার যারা নবম শ্রেণির বই ছাপার কাজ পেয়েছেন তারা ‘বড় মুদ্রণকারী’। তাদের হাতে অন্য কাজও কম। ফলে তারা আশা করছেন, ৫০ দিনের আগেই ছাপার কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে হিসাব করলেও হাতে সময় আছে ৫০ দিনেরও কম। এই কম সময়ে কিভাবে কী হবে তার উত্তর দেননি তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণি ও মাদ্রাসার ইবতেদায়ি একাধিক শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ হয় একসঙ্গে। এই শ্রেণিতে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৫ কোটি ৩৪ লাখের বেশি।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তার ২০ শতাংশ বই ছাপা হয়েছে। বাকি বই এখনো ছাপা হয়নি। বিদায়ী শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। এ জন্য বিনামূল্যে বিতরণের জন্য অন্যান্য শ্রেণির পাশাপাশি নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বই প্রণয়ন করে ছাপানোর কাজও করছে এনসিটিবি।
সূত্র আরো জানায়, গত মঙ্গলবার ক্রয় আদেশ ইস্যুসহ প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার পর বোর্ড সভা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বই ছাপানোর কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নবম শ্রেণির বই ছাপানোর দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫০ দিনের মধ্যে বই মুদ্রণ শেষ করে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পৌঁছে দেয়ার বাধ্যবাধকতা দেয়া হবে। আজ থেকে এই ৫০ দিনের হিসাব শুরু হলেও তা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক লুৎফুর রহমান বলেন, নবম শ্রেণির বই ছাপানো নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিয়েছেন। এখন বই ছাপানোর কাজ শুরু হবে। ৫০ দিনের মধ্যে বই ছাপিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
এনসিটিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই দফায় দফায় সংশোধন করা হয়েছে। এজন্য একটু বেশি সময় লেগেছে। নতুন শিক্ষাক্রম হওয়ায় সাবধানতার সঙ্গে বই ছাপানো হচ্ছে। নবম শ্রেণির বই ৫০ দিনের মধ্যে ছাপানোর বাধ্যবাধকতা দেয়া হলেও হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণে এই সময়ের মধ্যে বই ছাপানোর কাজ শেষ করা কষ্টসাধ্য।
সূত্র জানায়, প্রেস মালিকরা কাগজ না পাওয়ার কথা এনসিটিবিকে জানিয়েছে। কাগজের সংকট থাকলে বই ছাপানোর কাজ শুরু করা গেলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে বছরের প্রথম দিন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির এক কর্মকর্তা জানান, নবম শ্রেণির বই ছাপানো, বাঁধাই করা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পৌঁছে দেয়ার জন্য ৫০ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য শ্রেণির বই ছাপাতে এর চেয়ে অনেক বেশি সময় দেয়া হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে বই ছাপানোর নির্দেশনা দেয়ায় বইয়ের গুণগত মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে বইগুলো নিরাপদে পাঠানো নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অবরোধের অজুহাতে ছাপাখানাগুলো কাগজের সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছে। সব মিলিয়ে নবম শ্রেণির সব বই নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়