শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ
-অষ্টম ও নবম শ্রেণীর কার্যাদেশ এখনো হয়নি
-ছাপা শুরু হতে সময় লাগবে আরো ১৫ দিন
নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই নিয়েই শঙ্কা বেশি। কারণ নতুন শিক্ষাবর্ষের আর মাত্র আড়াই মাস বাকি থাকলেও অষ্টম ও নবম শ্রেণীর পাঠ্যবই ছাপার জন্য এখনো কার্যাদেশই দেয়া হয়নি। ফলে বছরের প্রথম দিনে বই দিয়ে জানুয়ারি থেকেই ক্লাস শুরুর সম্ভাবনাও এখন ক্ষীণ।
এ দিকে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণ তদারকি প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, এখনো হাতে যে সময় আছে তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। নবম শ্রেণীর বই মুদ্রণের জন্য খুব বেশি সময় লাগবে না। কেননা পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা অনেক বেশি। তবে কিছুটা দেরি হলেও আশা কররি শিক্ষার্থীরা যথাসময়েই বই হাতে পাবে।
সূত্র মতে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের চারটি শ্রেণীতেই নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই পাবে শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন কারিকুলামের বই দেয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষাবর্ষে আরো দুই শ্রেণীতে অর্থাৎ অষ্টম ও নবম শ্রেণীতেও নতুন কারিকুলামের বই মুদ্রণ করা হবে। যেহেতু নতুন কারিকুলাম আর নতুন করেই এসব ক্লাসের বই নতুন করে পাণ্ডুলিপি লেখা হয়েছে তাই মুদ্রণ কাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া বইয়ের চাহিদাও বেড়েছে। সূত্র জানায় আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের জন্য মোট বইয়ের চাহিদা দাঁড়াবে ৯ কোটি ৭৩ লাখেরও বেশি।
অন্য দিকে প্রাথমিকের জন্যও নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মাধ্যমিকের তুলনায় পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে এগিয়ে রয়েছে প্রাথমিকের মুদ্রণের কাজ। এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেয়ার জন্য বিনামূল্যের নতুন বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছবে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। সংসদ ভবনে গত রোববার অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য আলী আজম, শিরীন আখতার, ফেরদৌসী ইসলাম ও কাজী মনিরুল ইসলাম।
সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য মতে শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে বই দিতে নির্দিষ্ট সময়ে উপজেলায় পৌঁছে যাবে। প্রাথমিক শিক্ষার কাক্সিক্ষত ও গুণগত মান নিশ্চিতে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানে শিক্ষকদের আরো দায়িত্বশীল হতে পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে আগামী নভেম্বরে। এজন্য আগেভাগে বই সরবরাহ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকের সব বই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে উপজেলায় পৌঁছে যাবে। সেই লক্ষ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনে দেশব্যাপী পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদযাপন হলেও বই সঙ্কটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানেই নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেই বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। অনেক জেলায় উপজেলা পর্যায়ে মার্চ এপ্রিলে বই পায় শিক্ষার্থীরা। তাই আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য আগে ভাগেই পাঠ্যবই উপজেলায় পৌঁছে দেয়ার চিন্তা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন কারিকুলাম হওয়ার কারণে বইয়ের পাণ্ডুলিপি লেখার কাজেই বেশ সময়ে পার হয়ে যায়। ফলে বছরের শুরুর দিনে বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো রয়েই গেছে।
যদিও এনসিটিবি বরাবরই বলার চেষ্টা করছে যে, চেষ্টা চলছে প্রথম দিনেই সব বই দেয়ার। অবশ্য সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই দিচ্ছে। আগামী বছরের জন্য প্রাক-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে প্রায় ৩২ কোটি কপি পাঠ্যবই ছাপানো হবে। এসব ছাপানো ও বিতরণে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি এবং পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খানও বলেন, যে গতিতে এনসিটিবি বই ছাপার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, তাতে আগামী বছরের ১ জানুয়ারিও সব বই পাবে না শিক্ষার্থীরা। কারণ, এবার একাধিক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান বেশি কাজ পাওয়ায় এনসিটিবি তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের পোস্টার ছাপাতে অতিরিক্ত কাগজ লাগায় কাগজসঙ্কটও দেখা দিতে পারে।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: ফরহাদুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি সম্ভব হবে। নবম বাদে অন্যান্য শ্রেণীর কাজ অনেকটাই গুছিয়ে এনেছি। তিনি বলেন, আমরা মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি টার্গেট নির্ধারণ করে দিয়েছি। এর মধ্যে ১০ নভেম্বরের মধ্যে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বই হাতে পাব। তবে নবম শ্রেণীর জন্য টার্গেট নির্ধারণ করেছি ২০ নভেম্বর। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান বই মুদ্রণের কাজ করবে তাদের সক্ষমতা এবার অনেক বেশি। তাই যথাসময়ে বই বিতরণ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই।নয়াদিগন্ত
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়