নিজস্ব প্রতিবেদক।।
নড়াইলে কলেজশিক্ষককে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় দীর্ঘ ১ মাস ১৫ দিন পর আগামীকাল বুধবার কলেজে যাচ্ছেন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী তাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে।
এদিকে ধিরে ধিরে কলেজে আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে কলেজের কার্যক্রম। এর আগে গত ২৪ জুলাই থেকে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। গত ১৮ জুন কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কলেজে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ এক মাস ৫ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৪ জুলাই কার্যক্রম শুরু হয়। ২৫ জুলাই থেকে এইসএসসির ক্লাস শরু হয়। তবে কলেজের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় তারা কলেজে যাচ্ছে না।
শিক্ষকরা জানায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে কলেজের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত যথাসময়ে কলেজে উপস্থিত হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক থাকায় সকলে উপস্থিত হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি কলেজ বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুশিয়ে নিতে।
মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তি জানান, অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় কলেজে যাওয়ার কথা রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবায়ের হোসেন চৌধূরী বলেন, আগামীকাল বুধবার কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের যাওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন- প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও পোস্ট মোছেনি রাহুল। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান।
এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এক পর্যায়ে পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সামনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে কলেজ থেকে বের করে পুলিশেরে গাড়িতে তোলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ওই ছাত্র রাহুল দেব রায়ের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।
অপরদিকে কলেজ শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনায় সদর উপজেলার মির্জাপুর ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোরসালিন বাদী হয়ে ১৭০ থেকে ১৮০ জন আজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্তু ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহমুদুর রহমান।