দেশসেরা প্রধান শিক্ষকের পুরস্কারে ভুলের ছড়াছড়ি

কিশোরগঞ্জ এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গায় লেখা হয়েছে ‘এম ভি সরকারি বালিক উচ্চ বিদ্যালয়’। ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টি কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত হলেও লেখা হয়েছে ময়মনসিংহ জেলার নাম।

এই ভুলগুলো নিছক কোনো শিক্ষার্থীর শিশুতোষ ভুল নয়। ভুলগুলো করেছে খোদ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ কিশোরগঞ্জের নাগরিক সমাজ।

‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯’ উপলক্ষে গত ২৬ জুন বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে কিশোরগঞ্জ এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শাহনাজ কবীরকে পুরস্কার দেয়। ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি পুরস্কার হিসেবে তাঁর হাতে পদক, সনদপত্র ও ক্রেস্ট দেন।

প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর বলেন, ভুলের বিষয়টি শুরুতে তাঁর নজরে আসেনি। বাসায় ফেরার পর ভুলগুলো চোখে পড়ে। তিনি এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেও পদকে ‘এম ভি’ সরকারি ‘বালিক’ উচ্চ বিদ্যালয় লেখা হয়েছে। যেখানে ‘এস ভি’ না লিখে লেখা হয়েছে ‘এম ভি’ এবং বালিকা জায়গায় ‘বালিক’। একইভাবে সনদপত্রেও ‘এস ভি’ না লিখে লেখা হয়েছে ‘এম ভি’, আবার বিদ্যালয়টি কিশোরগঞ্জের প্রতিষ্ঠান হলেও সনদপত্রে লেখা হয়েছে ‘ময়মনসিংহ’। পাশাপাশি ক্রেস্টেও ‘এস ভি’ না লিখে লেখা হয়েছে ‘এম ভি’। সনদপত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক ও সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের যৌথ স্বাক্ষর রয়েছে।

শাহনাজ কবীর বলেন, এসব ভুল সংশোধনের জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে অভিযোগ জানানোর জন্য পরিচালক, উপপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাউকে পাননি। ফলে ভুলে ভরা পুরস্কার নিয়েই ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি কিশোরগঞ্জে ফিরে আসেন।

শাহনাজ কবীর ২০০৬ সালের ৬ মার্চ এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তাঁর নেতৃত্বে এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বর্তমানে জেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে টানা দুবার এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় জেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। এরপর ২০১৫ সাল থেকে শতভাগ পাস ও সর্বাধিক জিপিএ ৫-এর কৃতিত্ব দেখিয়ে জেলায় ধারাবাহিকভাবে প্রথম স্থান দখল করে আসছে এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও এই ধারা অব্যাহত রেখে বিদ্যালয়ের মোট ২৩৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৩৬ জন জিপিএ ৫ সহ শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করে। একাডেমিক এই ফলাফলের বাইরে শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্য অঙ্গনেও প্রতিষ্ঠানটি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে।

এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী অশোক সরকার বলেন, যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলো ছড়ানোর কথা, তার বদলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অজ্ঞতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি মনে করি সম্মাননার নামে এ ধরনের অমার্জনীয় ভুলের জন্য এসব কর্মকর্তার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।