দেবীগঞ্জে ৪ বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি ছয় প্রাথমিকের নতুন ভবন

নিন্মমানে সামগ্রী ব্যবহার কাজ বন্ধ একটিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, পঞ্চগড়ঃ জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘ ৪ বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি ৬ টি প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ। নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগে একটি বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজও বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয়রা। স্থানীয় অধিবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন ঠিকাদারদের দায়িত্বহীনতা ও মুনাফালোভের কারণেই নির্মাণ কাজে এই দীর্ঘসুত্রীতা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছে অচিরেই কাজ সমাপ্ত না করলে চুক্তি বাতিল করা হবে।

জানাগেছে বর্তমান সরকারের চতুর্থ প্রার্থমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় ৫ টি প্যাকেজে ৬ টি প্রার্থমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের কাজ শুরু করার কথা ২০২০ সালে। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে ২০২১ সালেই বানিয়ারা পাড়া, বানুর হাট,দীঘলগ্রাম,চেপটিখুড়া,বটতলি ও সোনাহার ২ সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের এই ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্তি করার কথা। কিন্তু এখনো কোন ভবনের নির্মাণ ক্জা সমাপ্ত করা হয়নি। বিদ্যালয় কতৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি নতুন ভবন। নির্মাণ কাজের এই দীর্ঘসুত্রিতার কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অন্যদিকে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে এসব ভবনের কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় সম্প্রতি সোনাহার ২ সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ বন্ধও করে দিয়েছে তারা। স্থানীয় অধিবাসী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং শিক্ষকরা বলছেন বিদ্যালয়টির দেয়াল বাঁকা হয়ে গেছে। বালির সাথে সিমেন্ট কম মেশানোর কারণে ছাদের পলেস্তারা উঠে যাচ্ছে। ফাটলও দেখা দিয়েছে। দরজা নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নি¤œমানের কাঠ। বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে নি¤œমানের সামগ্রী। এই ভবনটির নির্মাণব্যায় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভবনটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেও এবছরেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

স্থানীয় অধিবাসী রেজওয়ানুল খালেদ জানান, নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাই আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদেরকে স্টিমেট দেখাতে হবে।

সোনাহার ২ সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসনাত আরা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভবনের কাজ চলছে। পুরাতন ভবনে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি আমাদের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি।

ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জামিনুর রহমান জানান, প্রথমদিকে চারট্রাক ২ নাম্বার ইট নিয়ে আসে ঠিকাদার। আমরা বুঝতে পারলে ইটগুলো ফেরত দেই। তারপরও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী নি¤œমানের। আমরা কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। ভবন নির্মাণে দীর্ঘসুত্রিতার জন্য ঠিকাদারদের দায়ী করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিতু আকতার জানান ভবন নির্মাণে দেরী হওয়ার কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা নানা সংকটে পড়েছেন। তিনি দ্রুত কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্টদের হাতে ভবন বুঝিয়ে দেবার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তবে ঠিকাদাররা এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তারা ভবন নির্মাণে দেরী হওয়ার কারন হিসেবে নির্মাণ সামগ্রীর মুল্য বৃদ্ধিকে উল্লেখ করেছেন। মেসার্স সাইফুল আলম ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী সাইফুল আলম জানান, সোনাহার ২ সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের কাজে আমার লোকসান হয়েছে। যারা অভিযোগ করেছে তারা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছে। আমি চাঁদা দেইনি বলে তারা এসব করছে।

জানা গেছে কাজ শেষ না করেই বরাদ্দের ৯০ ভাগ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন ঠিকাদাররা। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ বলছে ২০২১ সালে ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার কথা ছিলো। তৎকালীন সময়ে কর্মরত উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে বলে জানাগেছে। এ বিষয়ে ঠিকারদারদের বার বার তাগাদা দেয়া হলেও কাজ হয়নি। দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শাহারিয়ার ইসলাম শাকিল জানান এবছরের মধ্যে কাজ সমাপ্ত না করলে ঠিকাদারদের সাথে চুক্তি বাতিল করা হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/১০/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়