দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক কাওছার, অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহাল চায় বিটিএ

জাতীয়করণ আন্দোলনকে বিটিএ সাধারণ সম্পাদকের বরখাস্তের প্রতিবাদের আন্দোলনে রুপান্তরের চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের দায়ে রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ী সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ আন্দোলনের নেতা, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী কাওছার আহমেদ শেখ প্রধান শিক্ষক পদে বরখাস্ত হলেও অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে বিটিএ’র (কাওছার পন্থী) একদল শিক্ষক-কর্মচারী। এসময় নিজের দুর্নীতির বিষয়টি আড়াল করে উল্টো সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম এবং জাতীয়করণ আন্দোলন নস্যাৎ করতে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অভিযুক্ত এবং বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক কাওছার শেখের নেতৃত্বে বিটিএর কেন্দ্রীয় কিছু নেতাকর্মী এই মানববন্ধনে উপস্থিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনীর উপর আস্তা না থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর উপর অবিচল আস্তা রেখে মানবন্ধন শেষে কাওছার শেখের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানবন্ধনে বিটিএ’র কেন্দ্রীয় নেতাদের তেমন উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি।

বিভিন্ন সময়ে বিটিএর নেতৃত্বে করা আন্দোলন, সভা-সভাবেশে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো কাওছার শেখ আজকের মানবন্ধনে নিজের উপর ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ঢাকতে জাতীয়করণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি মানবন্ধনে  বলেন, জাতীয়করণ আন্দোলন ঠেকাতেই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। নিজের অপকর্ম ঠেকাতে জাতীয়করণ আন্দোলনে যোগ দেওয়া সারাদেশের শিক্ষকদের তার বরখাস্তের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসার উস্কানি দেন।

মানবন্ধনে বিদ্যালয়ের অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকার উন্নয়ন কাজে সভাপতি নিজের আশির্বাদপুষ্ট লোক দিয়ে উপ-কমিটি গঠন করেন এবং কাজ শেষে বার বার তাগিদ দেয়া স্বত্ত্বেও বিল-ভাইচার দাখিল না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অধ্যক্ষকে অসহযোগিতা করছেন। যার ফলে নিয়মিত ও সঠিকভাবে হিসাব-নিকাশ হালনাগাদ করা যাচ্ছে না। এছাড়াও সভাপতি নিজের আর্থিক জালিয়াতি ঢাকতে এবং জাতীয়করণ আন্দোলন দমাতেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  ‘

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির কাছে যথাযথ হিসাব বুঝে দেন নি বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক কাওছার শেখ। এছাড়াও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটি তদন্তে আসলে তার সাথে দেখা করেননি এবং কোন তথ্য দাখিল করেননি তিনি।

বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বলেন, আমাদের স্কুলটি উচ্চ বিদ্যালয়। ঢাকা বোর্ড এবং মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব জায়গাতে সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি, পাঠদান অনুমতি এবং এমপিওভুক্তি। কলেজ শাখার কোন অনুমোদন স্বীকৃত এবং এমপিওভুক্ত এমনকি কোন শিক্ষক, কর্মচারী নেই। তার পরও প্রধান শিক্ষক কাওছার শেখ নিজের নামের আগে অধ্যক্ষ ব্যবহার করার জন্য তিনি সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল এন্ড কলেজের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে আসছেন। প্রধান শিক্ষক হলেও নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে সব জায়গাতেই অধ্যক্ষ লিখছেন।

ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য বলেন, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষকের নাম মোঃ কাওছার শেখ অথচ তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের একজন সদস্যের মত শেখ আগে লিখে শেখ কাওছার আহমেদ পরিচয় নেবার চেষ্টা করে আসছেন। প্রধান শিক্ষক হয়েও তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবী করেন। কাওছার আহমেদ শেখ হয়েও শেখ কাওছার আহমেদ লেখেন। পুরাটাই তাঁর জালিয়াতিতে ভরা।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, একজন শিক্ষক নেতা হয়েও তিনি কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন, সেটাই প্রশ্ন। একাধিক বাড়ি আছে তার বিবির বাগিচার মতো জায়গায়। স্কুলের কাজ রেখে পরিচিত অন্য লোকজন নিয়ে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এভাবে একটা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিএর একাধিক দায়িত্বশীল নেতা শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, কাওছার শেখ জাতীয়করণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিটিএ সভাপতি এবং তাঁর নেতৃত্বেই সারা দেশের সাধারণ শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে প্রেসক্লাবে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তবে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্তের বিষয়টি নিয়ে বিব্রত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তবে বিষয়টি নিয়ে যেভাবে সারাদেশে জাতীয়করণ আন্দোলনের কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে আন্দোলন বিস্তার করা হচ্ছে তা জাতীয়করণ আন্দোলনকে পদদলিত করবে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয়করণ আন্দোলনকে বিটিএ সাধারণ সম্পাদকের বরখাস্তের প্রতিবাদের আন্দোলনে রুপান্তরের চেষ্টা চলছে। প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা না বললেও চাপা ক্ষোভ রয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।

যদি সরকারি কোন তদন্তে তাঁর আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে বিটিএর জাতীয় পরিষদ কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন কি’না জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, সেটা জাতীয় পরিষদই সিদ্ধান্ত দেবেন। তদন্ত এবং তদন্ত প্রতিবেদনে ভরসা করা গেলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী আবুল কালাম অনু শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আজ মানবন্ধন করেছে শুনেছি। প্রধান শিক্ষক হয়েও অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহাল চেয়েছেন তিনি। আমার নামে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছেন। জাতীয়করণের আন্দোলনকে তিনি তাঁর বরখাস্তের প্রতিবাদের আন্দোলনে রুপদানের চেষ্টা করছেন। আমি বিশ্বাস করি সারাদেশের শিক্ষক সমাজ তার মত দুর্নীতিগ্রস্থ প্রধান শিক্ষকের সঙ্গ দেবে না। আমাদের এখানে কোন কলেজের কার্যক্রম নেই। নেই কোন অনুমতি তারপরও জালিয়াতি করে তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করেন। তিনি যদি কোন অনিয়ম করে না থাকেন তাহলে ঢাকা বোর্ডের তদন্তের সময় তিনি উপস্থিত হলেন না কেন ? কোন কাগজপত্র দাখিল করলেন না কেন ? এতেই বোঝা যায় তিনি দুর্নীতিবাজ একজন প্রধান শিক্ষক।

আপনার অনৈতিক কাজে সহযোগিতা না করায় বরখাস্ত করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সভাপতি হিসেবে আমি যদি কোনো অনৈতিক কাজ করি, তাহলে তিনিও তো অনৈতিক কাজ করেছেন। আর্থিক বিষয়ে তো তারও স্বাক্ষর লাগে। তার সৎ সাহস থাকলে প্রমাণ হওয়া অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করুক।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/১১/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়