সুভাষ বিশ্বাস, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নেই অভিজ্ঞতার সনদ, নাম মাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শিক্ষাগত সনদও অগ্রহণযোগ্য হওয়ায় আটকে রয়েছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ড: আসাদুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান শাহ’র এমপিওভুক্তির আবেদন।
অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারায় কলেজ এমপিওভুক্তির পর টানা ৪ বছরেও বেতন কাঠামোয় নিজের নাম যুক্ত করতে নার পারলেও অধ্যক্ষ পদে বহাল আছেন অধক্ষ মাহবুবার রহমান শাহ। মাত্র তিন বছর প্রভাষক পদের অভিজ্ঞতার সনদে টানা ১৭ বছর ধরে অধ্যক্ষ তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজটি মাগুড়া কলেজ নামে ২০০০ সালে স্থাপিত হয়। নন-এমপিও কলেজটি ২০০৩ সালে প্রভাষক পদে যোগদান করেন বর্তমান অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান শাহ। এরপর জালিয়াতির মাধ্যমে ২০০৬ সালে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করেন তিনি। মাত্র তিন বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। পরবর্তীতে ২০১৯ নীলফামারী- ৪ আসনের সংসদ সদস্য (জাপা) আহসান আদেলুর রহমান আদেল কলেজটির নাম পরিবর্তন করে পিতার নামে ড: আসাদুর রহমান কলেজে রাখেন। একই বছর ২০১৯ সালে কলেজটি এমপিওভুক্তি হয়। কলেজটি এমপিওভুক্তির পরে সকল শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত হলেও আটকে যায় অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান শাহ’র এমপিওভুক্তির আবেদন।
২০০৩ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করলেও ২০০৬ সালে তিন বছরের অভিজ্ঞতার সনদ ও একাডেমিক সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ নেন মাহবুবার রহমান শাহ। ফলে আজ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হতে পারেননি তিনি। তবে কোনদিনও তিনি অধ্যক্ষ পদে এই অভিজ্ঞতা নিয়ে এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না বলে জানান সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকদের অভি্যোগ, অধ্যক্ষ সহ অন্য শিক্ষকরাও কলেজ আসেন তার খেয়াল খুশি মত। হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করা হয়না। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্যের বড় বোন হওয়ায় অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে সাহস পাননা কেউ-ই। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের নানা অনিয়মের কারণে কলেজটিতে শিক্ষার মান এখন নিম্নগামী। গত সনে এইচএসসিতে ১৬৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও কৃতকার্য হয় মাত্র ৮৪ জন।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান শাহ প্রতিনিয়ত কলেজে আসেন দুপুর ১২টার পর। অন্যান্য শিক্ষকরা আসেন সকাল ১১টায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাম্য যোগ্যতা না থাকা স্বত্বেও জালিয়াতি করে অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নেওয়া মাহবুবার রহমান শাহ যেহেতু সরকারি বেতনের অংশ পাননা সেহেতু তিনি কলেজ ফান্ড, শিক্ষার্থীদের থেকে নামে বেনামে অর্থ আদায় করে তা বেতন হিসেবে আত্মসাৎ করছেন নিয়মিত। ফলে শিক্ষার্থী পাস করল কি অকৃতকার্য হলো তা দেখার বিষয় না তার কাছে। তিনি শুধু টাকা পেলেই হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড: আসাদুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান শাহ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমার অভিজ্ঞতা সনদ না থাকায় বেতন এমপিও ভুক্ত হচ্ছে না কর্তৃপক্ষ আটকে রেখেছে। তবে খেয়াল খুশিমতো কলেজে আসা ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার বিষয টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নিং বডির সভাপতি মেহেজেবুন্নেসা টুম্পা জানান, বিষয়টি আমি মাসিক গভর্নিং বডির মিটিং এ তুলব তারপর আপনাকে জানাবো।
কিশোরীগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ টি এম নুরুল আমিন শাহ বলেন, কিভাবে অভিজ্ঞতা ছাড়া অধ্যক্ষ হন এবং তা বহাল তবীয়তে থাকনে তা গভর্নিং বডি ভালো বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো:হাফিজুর রহমান শিক্ষাবার্তাকে জানান, এভাবে কেউ নিয়োগ পেলে সারা জীবনেও বেতন হবেনা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চল এর পরিচালক প্রফেসর এস এম আব্দুল মতিন লস্কর শিক্ষাবর্তাকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন এমপিও বিহীন শিক্ষক অধ্যক্ষ হিসেবে থাকার নিয়ম নেই। এখনও কেন বহাল আছেন অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান শাহ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমি জানিনা এটা গভর্নিং বডির কাজ চাইলে এক দিনেই গভর্নিং বডি অব্যাহতি দিতে পারে । তিনি জানান, শুধু অভিজ্ঞতার ঘাটতি নয়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট নিয়ে সমস্যা আছে তার।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩০/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়