তিন কোটি টাকার স্কুলভবন হস্তান্তরের আগেই ছাদ চুঁইয়ে পড়ছে পানি

সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়

সুনামগঞ্জঃ  এক বছর আগে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো ভবন হস্তান্তর করা হয়নি। এর আগেই কাজ সম্পন্ন হওয়া ছাদ চুঁইয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি। চুঁইয়ে পড়া জায়গা স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। কিছু স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে এগুলো ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই চিত্র জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা নতুন ভবনের।

বিদ্যালয়ের নতুন এই ভবন নির্মাণে সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। বড় ধরনের অনিয়ম না হলে ঢালাই ভেদ করে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে পড়ার কথা নয়। এমনটি বলছেন সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা জানিয়েছেন, ঢালাই কাজ শেষে পানি চুঁইয়ে পড়ার বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নজরে আনলেও তারা আমলে নেয়নি।

অভিযোগ উঠেছে ভবনের বেইজ ঢালাই, বিম ঢালাই, ছাদ ঢালাইসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে সার্বক্ষণিক তদারকির নিয়ম থাকলেও সাইটে থাকেন না ইঞ্জিনিয়ার। এতে ঠিকাদাররা নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ পান। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনের বিমে ফাটল, ছাদ চুঁয়ে পানি পড়া, ফিটিং সঠিক না হওয়া, ছাদে ফাটল ধরা, পলেস্তারা উঠে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। ভবন নির্মাণের শেষ দিকে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে দায়সারা কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের। স্থানীয়রা বলছেন, অবহেলিত বৃহত্তর নাছিমপুর এলাকার মানুষের দীর্ঘ আকাক্সক্ষার ফসল সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়ম হলেও কেউ দেখার নেই।

এ দিকে একাডেমিক ভবনের কাজের শুরুতেই নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার আর নানা অনিয়মের অভিযোগে কয়েকবার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির লোকজন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের একাধিক বাধা নিষেধের পরও বন্ধ হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম। একের পর এক কাজে অনিয়ম আর দুর্নীতির শেষ নেই।

জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সুনামগঞ্জের অধীনে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় সিলেটের বিয়ানীবাজারের আশা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত দেড় বছর সময়ে কাজ করার নির্দেশনা থাকলেও ৪ বছরে ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারাভাবে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে শুরু থেকেই কাজের গুণগত মান নিয়ে সর্বমহলে প্রশ্ন ওঠে। কাজের মানের বিষয়ে কোনো কথা বললেই স্থানীয় লোকজনদের হুমকি ও ভয় দেখায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আপ্তাব উদ্দিন মেম্বার জানান, ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার ৪ তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ছাদ চুঁইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। কাজের অনিয়মে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ফাটলসহ ভবনের নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। অনিয়ম দেখে কয়েকবার কাজে বাধা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা আমলে নেয়নি।

ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম জানান, সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতি হচ্ছে। সরকারের এত টাকা পানিতে ভেসে যাচ্ছে। দেড় বছরের কাজ ৪ বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবুও নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ছে।

আশা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার এবাদ উদ্দিনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। স্কুল ভবনের কাজ এখনো শেষ হয়নি তাই একটু অসুবিধা হতে পারে। কাজ শেষ হওয়ার পর দেখে আসবেন।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অবহেলার বিষয়টি দেখা হবে। কিন্তু পানি চুঁইয়ে পড়েছে এটা আমাকে প্রতিষ্ঠান থেকে অবগত করা হয়নি। এর পরও যদি কাজে ত্রুটি থাকে অবশ্যই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় কাজ সঠিকভাবে করে দিতে হবে। ত্রুটিগুলো সংশোধন না করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৮/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়