তিন কিমি.পথ হেঁটে বিদ্যার্জন করতে হয় শিশুদের

করিচিয়ায় স্কুল নেই

যশোরঃ সরকারি উদ্যোগে প্রতি গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও ব্যতিক্রম যশোর সদর উপজেলার করিচিয়া। স্কুল না থাকায় এ গ্রামের পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে যেতে হয় তিন কিলোমিটার দূরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণ নিরবচ্ছিন্ন করতে নিজ গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবি শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের। শিক্ষা বিভাগ বলছে স্থানীয়দের আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যশোর সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম করিচিয়া। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও দুই হাজার ৯শ’ ভোটারের এ গ্রামে সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠেনি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ এ গ্রামে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। আর তাদের পাঠগ্রহণ করতে হেঁটে বা ভ্যানে চেপে যেতে হয় তিন কিলোমিটার দূরে পাশের গ্রামের স্কুলে।

স্থানীয়দের দাবি, ১৯৯১ সালে গ্রামবাসীর উদ্যোগে গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হলেও অর্থাভাবে ২০০৫ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বিনা বেতনের শিক্ষকরা জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। ফলে করিচিয়া গ্রামের ছেলে মেয়েরা বাধ্য হয়ে তিন কিলোমিটার দূরের স্কুলে যায়। আর তাদের চাপে নাজেহাল পাশের স্কুলের শিক্ষকরা। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণ নিরবচ্ছিন্ন করতে নিজ গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবি শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের।

এলাকাবাসীরা জানান, ১৯৯১ সালে গ্রামবাসীর উদ্যোগ নিয়ে এক বিঘা জমির ওপর করিচিয়া মধ্যপাড়া বেসরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন ওই স্কুলে শিক্ষার্থী ছিল ৩শ’ জন। শিক্ষক ছিলেন চার জন। বিনা বেতনে তারা প্রায় ১৪ বছর ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন। দিনে দিনে স্কুলের অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে, চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত স্কুলটি টিকে থাকলেও আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। এখন ফাঁকা মাঠ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা কুতুবউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা অনেক কষ্ট করে পাঠগ্রহণ করছে। গ্রামের পাঁচশতাধিক ছাত্রছাত্রীকে হেঁটে বা ভ্যানে করে পাশের গ্রামে স্কুলে যেতে হয়। আমরা একটি স্কুল স্থাপনের জন্য অনেক সরকারি কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা সরজমিনে দেখে গেছে, কিন্তু তারা কোনো সুরাহা করতে পারেনি। অথচ পাশের গ্রামে করিচিয়া-গোয়ালদাহ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। তিন গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের একমাত্র বিদ্যালয় এখন এটা।

করিচিয়া গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়ামিন হাসান রাফি বলে, ‘আমাদের গ্রামে স্কুল না থাকায় এত দূরে এসে ক্লাস করি। কখনও ভ্যানে বা কখনও বাবার সাইকেলে করে আবার কখনও হেঁটে স্কুলে আসতে হয়। অনেক কষ্ঠ হয়, আমরা একটা স্কুল চাই।’

আল- জোবায়ের মিরাজ নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলে, ‘স্কুলে আসতে হলে আমাদের একটি বড় রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। রাস্তা পার হবার সময় খুব ভয় লাগে। তাছাড়া ঝড় বৃষ্টির সময় স্কুলে আসা হয় না। এতে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে।’

করিচিয়া গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিএম হুমায়ুন বলেন, ‘করিচিয়া গ্রামে কোন স্কুল না থাকয় ওই গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রায় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমার স্কুলে আসে। ছোট ছোট শিশুরা যে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসে তাতে আমরা শিক্ষকরা সবসময় তটস্থ থাকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই স্কুলে মোট তিন গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা আসে। ছাত্রছাত্রী অনুযায়ী আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা কম। ফলে পড়াশোনা করানোও কষ্টসাধ্য। করিচিয়া গ্রামে দ্রুত একটি স্কুল প্রয়োজন।’

যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীম রেজা বলেন, ‘করিচিয়া ও তেঁতুলিয়া নিয়ে একটি ওয়ার্ড। এ দুটি গ্রামেই কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। দুই গ্রামের সাড়ে তিন হাজার ভোটার। তাদের বাচ্চার প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যায়। তাদের অনেক কষ্ট হয়। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে স্কুলের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’

এদিকে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘করিচিয়া-গোয়ালদহ নামে স্কুল থাকায় আমরা এতদিন জানতাম করিচিয়া গ্রামে স্কুল রয়েছে। তবে সম্প্রতি জেনেছি ওই গ্রামে কোনো স্কুল নেই। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী করিচিয়া গ্রামে একটি স্কুল থাকার কথা। এখন ওই গ্রামের কোনো ব্যক্তি জমি দান করলে এবং এলাকাবাসী একযোগে আবেদন করলে স্কুল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষাকে নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রতি দুই কিলোমিটার ব্যবধানে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের উল্লেখ রয়েছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়