‘তর্জনী’ উঁচু বঙ্গবন্ধু দেখাবেন দিশা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। যেখানে সোনালি রোদে ঢেউ খেলে ইতিহাস। যার সবুজ ঘাসেরা কথা বলে মুক্তির। নির্মল হাওয়া কানে কানে ডাক দিয়ে যায় স্বাধীনতার। যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃক্ষরাজিকে সাক্ষী রেখে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু, ট্যাংক-বোমার সামনে দাঁড়িয়ে তর্জনী উঁচু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে প্রস্তুত করেছিলেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক সেই স্থানটিতেই নির্মিত হচ্ছে ২৬ ফুট উচ্চতার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। ঐতিহাসিক ক্ষণটি স্মরণে, যে ভাষণ এনে দিয়েছিল স্বাধীনতা, সেই তর্জনী উঁচু ঐতিহাসিক ভাষণটির স্মরণে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ প্রকল্প কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছর ৭ মার্চের মধ্যেই ভাস্কর্যটি নির্মাণকাজ শেষ হবে। ‘তর্জনী’ উঁচু বঙ্গবন্ধু জাতিকে দিশা দেখাবেন বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ৭ মার্চকে ঐতিহাসিক জাতীয় দিবস হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ওই রুলে সাত মার্চ বঙ্গবন্ধু যে স্থানে ভাষণ দিয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও ইন্দিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে; সেই স্থানে মঞ্চ পুনর্নির্মাণ এবং বক্তব্যরত বঙ্গবন্ধুর আঙুল উঁচানো ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন আদালত। ওই বছরের ৩০ অক্টোবরে ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরের বছর ২০১৮ সালের ৪ মার্চ বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণস্থল চিহ্নিত করে ভাস্কর্য নির্মাণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) আওতায় নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গাটিকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রাণবন্ত বা জাগ্রত করে রাখতে ৩০ ফুট প্রশস্ত সৌন্দর্যবর্ধন জলধারার ওপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ যেভাবে মঞ্চ সাজানো হয়েছিল সেই একই মঞ্চের আকৃতিতে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভাস্কর্য। সেইসঙ্গে মঞ্চটির চারদিকে বিভিন্ন লেজার লাইটের মাধ্যমে আলোকিত করা হবে পুরো জায়গাটিকে। পাশাপাশি থাকবে ফুলের বাগান, জলধারার মাঝখানে গ্লাস টাওয়ার ও শিখা চিরন্তন বরাবর ৪০ ফিট প্রশস্ত পেডেস্ট্রেন রোড। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের জলধারার নিচে ঠিক মঞ্চটির আন্ডারগ্রাউন্ডে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গার উপর গাড়ি রাখার ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে প্রায় ৫৬০টি গাড়ি একসঙ্গে রাখা যাবে। এছাড়া শিশু ও বয়স্কদের জন্য থাকছে দুটি লিফট।

এ ভাস্কর্যের উচ্চতা হবে ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং বেদি ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য তরুণ প্রজন্মসহ সমগ্র বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা। গণপূর্ত অধিদপ্তর এ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মর্মস্পর্শী, অনুভূতিগুলো প্রতিফলিত করাই হচ্ছে এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ প্রসঙ্গে ভোরের কাগজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে ভাস্কর্য ব্রোঞ্জের তৈরি করার কথা ছিল। এখন পিতলের তৈরি করা হবে। আগামী ৭ মার্চের আগেই ভাস্কর্য নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তিনি বলেন, তর্জনী উঁচু করে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর তজর্নীই জাতিকে দিশা দেখাবে।

স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রমনা গণপূর্ত উপবিভাগ-১ এর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির জানান, দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে ৭টি ফুড কোর্ট। এছাড়া মঞ্চটির পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শিশু পার্কে আগত দর্শনার্থীদের জন্য ৫০ ফিট লম্বা ও ৫০ ফিট চওড়া দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদসহ জনসভার জন্য স্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হবে। থাকছে গøাস টাওয়ারের চারদিকে গ্রিন হেজ বাউন্ডারি ও ৪৪টি আধুনিক ফুলের দোকান।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৩/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়