ঢাবি: “ইতিহাসে নারীকে দমিয়ে রাখা হয়েছে”

ইতিহাসে নারীর গৌরবগাঁথাকে দমিয়ে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ আয়োজিত ৪৯তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

বক্তৃতায় স্পীকার বলেন, আমাদের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে নারীরা অসামান্য অবদান রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধে নারীরা অনুপ্রাণিত করেছে। জাহানারা ইমামের মতো অসংখ্য নারী মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু তাদের ইতিহাসকে দমিয়ে রাখা হয়েছে।

এসময় তিনি আরো বলেন, ইতিহাসে নারীকে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে নারীকে অগ্রসর হতে হয়েছে। অনেক বৈষম্য ও পশ্চাৎপদতার শিকার হয়েছে। কিন্তু শক্তির জায়গা হচ্ছে এই সকল বাধা অতিক্রম করে নারী কিন্তু তার সফলতা ও জয়ের গল্প রচনা করেছে। রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীকে খুঁজে পাওয়া যাবে। বর্তমানে নারীরা গার্মেন্টস ও কৃষিক্ষেত্রে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নারীদের আর দমিয়ে রাখা নয়, তাদের গৌরবগাঁথাকে এগিয়ে নিতে হবে।

এর আগে আনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের নিয়ে এক ধরনের দ্বৈততা রয়েছে। একদিকে আমরা নারীকে মা বলে ডাকি, দেবী দূর্গা তার প্রতীক। তার পূঁজা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সামাজিকভাবে নারী অবস্থা শোচনীয়। এই যে দ্বৈততা, তার একটা অবসান প্রয়োজন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ্ বলেন,
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় সম্পর্কে তাদের ধারণা অতি সামান্য। মাতৃভাষা চর্চার প্রতি অনিহা। এই অশনিসংকেত উত্তরণে সকল কলেজ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ও মাতৃভাষাকে কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের বর্তমার প্রজন্ম ইতিহাস বিমুখ হয়ে পড়েছে। এর কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ রয়েছে। এ গলদ কাটিয়ে উঠতে আমাদের কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ইতিহাস সময়ের প্রতিবিম্ব। ইতিহাসকে ত্রিমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে হয়। বর্তমানকে বুঝতে হলে অতীতকে জানতে হবে। সামনের দিকে সম্ভাবনা দেখতে হবে। একটি জাতির উত্থান, অগ্রগতি ও বিকাশকে ধারণ করে ইতিহাস। বাঙালির গৌরবজ্জ্বল অতীত বর্তমান প্রজন্মের সামনের তুলে ধরতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নারীর গৌরবগাঁথা তুলে ধরতে হবে।

এবারের ৪৯তম আন্তর্জাতিক ইতিহাস সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় ” ইতিহাসে নারী: দক্ষিণ এশিয়া প্রসঙ্গ”। এ বিষয়ে ভারতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, ইতিহাসবিদ ও গবেষকগণ তাদের গবেষণা প্রবন্ধ তুলে ধরেন।