নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ না নেওয়ায় চার বছরেও হয়নি ডাকসুর নতুন নির্বাচন। পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে সে সম্পর্কেও নেই কোনো নিশ্চয়তা। এদিকে ডাকসু নির্বাচন না হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, অফিসার অ্যাসোসিয়েশন, সাংবাদিক সমিতি, কর্মচারী সমিতি, চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতিসহ সব সংগঠনেরই নির্বাচন হচ্ছে নিয়মিত। ডাকসু নির্বাচন না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ডাকসু নির্বাচন প্রতিবছরই হতে পারে। প্রশাসন করে না কেন? এটা তাদের ব্যর্থতা। এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
জানা যায়, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়া ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হয়। ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সব প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া ২৩টি পদে জয়লাভ করে ছাত্রলীগ। ২৩ মার্চ নির্বাচিতরা দায়িত্ব নেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ডাকসুর মেয়াদ পার হয়। এরপর বর্ধিত ৯০ দিন ২০ জুন শেষ হলেও তখন করোনার দোহাই দিয়ে নির্বাচন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে করোনার পর ওই বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলেও এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি ডাকসু নির্বাচন। পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়েও দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কমিটির মেয়াদ থাকে এক বছর। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সংগঠনটির নির্বাচন হয়েছে। করোনার কারণে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তাদের ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের শিক্ষক সমিতি নির্বাচন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের কমিটির মেয়াদ দুই বছর। ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর ২০২১ সালে মার্চ মাসে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তাদের নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী মাসে তাদের নতুন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি। একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি সংগঠন ও সমিতিগুলোর নির্বাচনে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম যুগান্তরকে বলেন, আমরা নিয়মিতই অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন করে আসাছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কখনো কোনো বাধা আসেনি। আগামী মাসে আমাদের পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে নির্বাচন কমিশনার থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ স্যার।
ডাকসুর মেয়াদ ও নির্বাচন নিয়ে গঠনতন্ত্রের ৬(সি) ধারায় বলা হয়েছে-নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ইউনিয়ন ৩৬৫ দিন দায়িত্ব পালন করবে। কোনো কারণে নির্বাচন না হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ৯০ দিনের কম সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে এ ইউনিয়ন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যাবে। গঠনতন্ত্রের ৫(এ) ধারায় বলা হয়েছে-কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি বা উপাচার্য ইউনিয়নের স্বার্থে সংসদ ভেঙে দিতে পারবেন। নতুন নির্বাচনের জন্য পুরো নির্বাহী সংসদকে ভেঙে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তও নিতে পারবেন তিনি। সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইউনিয়নকে সাসপেন্ড করতে পারবেন। ৮(ই) ধারায় বলা হয়েছে-‘ডাকসুর সভাপতি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনের দিন, তারিখ ও ভোটগ্রহণের সময় ঠিক করে সবাইকে জানাবেন।
এ বিষয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নয়। যদিও আইনের ভেতর আছে বিশ্ববিদ্যালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকার এখন ডাকসু নির্বাচন দিতে চায় না। ডাকসু কেন, কোনো নির্বাচনই সরকার এখন দিতে চায় না। কোনোরকম জাতীয় নির্বাচনই পার হওয়া তাদের একমাত্র চিন্তা। এ সময় কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন তারা করবে না।
ডাকসুর সাবেক এজিএস ও ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন দিতে আইনগতভাবে, নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ। ছাত্রলীগসহ সব ছাত্র সংগঠনের প্রাণের দাবি ছিল যে, ডাকসু নির্বাচন ক্যালেন্ডার ইভেন্টে পরিণত করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে আমি মনে করি। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি ডাকসু নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং অবিচ্ছেদ্য বিষয়। আমরা যদি দক্ষ গ্রাজুয়েট, বিশ্বের উচ্চশিক্ষার মানচিত্রে স্থান করে নিতে চাই তার জন্য ডাকসু নির্বাচনের বিকল্প নেই।
পরবর্তী ডাকসু নির্বাচন কবে হবে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা আমাদের নিশ্চয়ই ভাবতে হবে। একটা সুন্দর পরিবেশও খুব জরুরি। সেটার জন্যই মূলত অপেক্ষা করছি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১১/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়