ঢাকায় মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বাংলাদেশের সাথে নিরাপত্তা সংলাপে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। আজ নবম দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এতে অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমরাস্ত্র কেনার পূর্বশর্ত হিসেবে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) চূড়ান্ত করার বিষয়টি আলোচিত হতে পারে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন।

নিরাপত্তা সংলাপে ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার, সামরিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, শান্তিরক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, বাংলাদেশের সাথে নিরাপত্তাবিষয়ক অংশীদারিত্ব অত্যন্ত শক্তিশালী। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উভয় দেশের স্বার্থ অভিন্ন। এ অঞ্চলকে মুক্ত, অবারিত, শান্তিপূর্ণ এবং সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গি একই।

গত বছর এপ্রিলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বনি জেনকিন্স।

এই সংলাপে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ওপর গুরুত্ব দেয় ঢাকা। তবে ওয়াশিংটনের পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে ভুল শোধরানোর উপায় হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার একটি আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি প্রত্যাহার করতে হলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। নির্বাহী আদেশ দিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা সম্ভব না।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাব এবং এর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যা বাংলাদেশের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত। বাংলাদেশের মতে, ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে গত ২৪ মে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা অবৈধ কাজে সহযোগীদের ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনী। এবারের নিরাপত্তা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, সামরিক প্রশিক্ষণ, সমুদ্র নিরাপত্তা, প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো, প্রতিরক্ষা ক্রয়, সক্ষমতা উন্নয়নসহ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সফলতার প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়নে এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে দেশটি সহায়তা দেয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর চালানো নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একইসাথে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামজিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।