ডিপিই প্রায় পুরোটা চলে গেছে প্রশাসন ক্যাডারের দখলে

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তর দখলে নিচ্ছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা। শিক্ষা প্রশাসনেই শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা টিকতে পারছেন না। ইতিমধ্যে বেশ কটি শিক্ষা দপ্তর প্রায় শূন্য; শিক্ষা ক্যাডারের লোকজন বলতে গেলে নেই। আরও কয়েকটি দপ্তরে যে অবস্থা দাঁড়াচ্ছে তাতে শিগগির শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘শিক্ষা’ একটি বিশেষায়িত দপ্তর। এখানে প্রশাসন ক্যাডারের কেউ এলে তার পক্ষে তাল মেলানো সহজ নয়। শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা চাকরির শুরুতেই ‘শিক্ষা’ নিয়ে কাজ করেন। তাদের এ-বিষয়ক নানা প্রশিক্ষণও থাকে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের মেধাবী কর্মকর্তারা যেভাবে শিক্ষা-প্রশাসনের কাজ সামলান, অন্য ক্যাডারের সদস্যদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরে খুব অল্প সময়ের জন্য আসে। আবার ভালো পদায়ন হলেই চলে যায়। অল্প সময়ে একটা দপ্তরের কাজ পুরোপুরি বোঝে ওঠা সম্ভব নয়।

এ কারণে শিক্ষার মানেরও যথাযথ উন্নয়ন হচ্ছে না।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শওকত হোসেন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ছে। ফলে শিক্ষার নতুন দপ্তর হবে, এটাই স্বাভাবিক। যে দপ্তরই হোক, তাতে শিক্ষা ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি, আমাদের পদগুলো দখল করা হচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডারকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। আমরা তা চাই না। আমরা চাই সরকারকে সহযোগিতা করতে। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত এর সমাধান না হলে ফুঁসে উঠতে পারেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা।’

সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) প্রায় পুরোটা চলে গেছে প্রশাসন ক্যাডারের দখলে। একজন মহাপরিচালক, দুজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং ১০ জন বিভাগীয় পরিচালকের সবাই প্রশাসন ক্যাডারের। তারা অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব পদমর্যাদার। বিভিন্ন উপপরিচালক পদেও উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা রয়েছেন। শিক্ষা ক্যাডারের দু-একজন কর্মকর্তাও আছেন। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক পদে একজন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন। বেশির ভাগ পরিচালক পদে রয়েছেন যুগ্মসচিবরা। এখানে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য নেই বললেই চলে। এমনকি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব পদটিও দখল করে নিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা।

সাত বছর আগে মাদ্রাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগে মাদ্রাসাবিষয়ক কাজ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর থেকেই হতো। ফলে মাদ্রাসার কাজ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের জানা। কিন্তু এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একজন অতিরিক্ত সচিব। পরিচালক পদেও এখন প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়িত হচ্ছে। অন্যান্য পদে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা থাকলেও তারা একে একে প্রত্যাহৃত হচ্ছেন। সম্প্রতি এই অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা ক্যাডারের ১৯ জনকে প্রেষণে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাতথ্য ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমির (নেপ) মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে রয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান একজন অতিরিক্ত সচিব। এই দপ্তরের পরিচালক পদগুলোতেও প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা রয়েছেন। বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলও প্রশাসন ক্যাডারের। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানেও প্রশাসন ক্যাডারের দু-একজন সদস্য আছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমির (নায়েম) পদগুলোর নিয়ন্ত্রণ এখনো শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের হাতে। সেখানেও প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের ঢোকানোর চেষ্টা চলছে। শিক্ষার একাধিক প্রকল্পে পিডি প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা।

মাদ্রাসা অধিদপ্তর নিয়ে বর্তমানে শিক্ষা ক্যাডার ও প্রশাসন-ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে। অধিদপ্তরের নিয়োগবিধিতে বলা হয়েছে, নবম গ্রেডের ওপরে যারা তারা এখানে পদায়ন পাবেন। শুরুতে মহাপরিচালক পদে একজন যুগ্মসচিবকে পদায়িত করলেও এখন আছেন একজন অতিরিক্ত সচিব। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা আদালত পর্যন্ত যান। আদালত এ বিষয়ে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারের বাইরে কাউকে পদায়ন করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে সরকার আপিল করলে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় এবং মামলাটি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়। এই সুযোগে শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ কর্মকর্তাকে মাদ্রাসা অধিদপ্তর থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে নিয়মিত বেঞ্চে মামলার শুনানি হলে আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কিন্তু তা না মেনে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা ক্যাডারের আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেহেতু প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা চালান, তাই তারা প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষেই থাকেন। শিক্ষা দপ্তরগুলোতে যে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের আধিক্য থাকা উচিত সে কথা তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে তুলেও ধরেন না।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শওকত হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরের পদগুলো শিক্ষা ক্যাডারের শিডিউলভুক্ত। মাদ্রাসা অধিদপ্তর কিছুদিন আগেও মাউশি অধিদপ্তরের অংশ ছিল। ফলে মাদ্রাসা অধিদপ্তর মাউশির আদলেই হওয়া উচিত। দুই অধিদপ্তরের কাজের ধরনও এক। কিন্তু একটা বিশেষ ক্যাডার মাদ্রাসা অধিদপ্তরে দখলদারিত্ব করছে। এমনকি আদালত শিক্ষা ক্যাডারের পক্ষে রায় দিলেও তারা মানছেন না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দপ্তর নিয়েও মামলা চলছে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/০৩/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়